ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ভারত নির্ভরতা কাটছেই না, কোটি কোটি ডলার যাচ্ছে দেশটিতে
টুইট ডেস্ক: ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ। ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের ৫০ শতাংশই আমদানি করতে হচ্ছে। বছরে প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় ব্যান্ডউইথ কিনতে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বাবদ ২০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা গেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পকেটে।
টেলিজিওগ্রাফির পূর্বাভাস বলছে, ২০২৭ সালে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ হাজার জিবিপিএসের কাছাকাছি। বর্তমানে রাষ্ট্রায়াত্ত দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ৭ হাজার ২শ’ জিবিপিএস। এর মধ্যে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের জীবনকাল শেষ হয়ে গেছে। এখান থেকে প্রাপ্ত ৪ হাজার ২শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের সরবরাহ যেকোনো সময় বন্ধ হওয়ার পথে। এই ঝুঁকি বাদেও ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ব্যান্ডউইথের ঘাটতি থাকবে আরও ১৮ হাজার জিবিপিএস।
আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হলে ২০২৭ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতকে পরিশোধ করতে হবে আরও ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অথচ এর অর্ধেকেরও কম খরচে একটি নতুন সাবমেরিন ক্যাবল নির্মাণ সম্ভব। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্ণ সক্ষমতা তৈরি করতে না পারলে আরও চড়া মাসুল দিতে হবে। নিশ্চিত করা যাবে না নিরাপদ ইন্টারনেট।
মেটাকোর সাবকম লিমিটেডের সিইও আমিনুল হাকিম বললেন, আমরা যেই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ভারতে পাঠিয়েছি, সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে আরও ৮ থেকে ১০টা সাবমেরিন ক্যাবল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
এদিকে, আইটিসি অপারেটরের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করা হয়। আইটিসির এক প্রান্তের অ্যাক্টিভ ডিভাইস বাংলাদেশে থাকলেও অপর প্রান্তের ডিভাইস আছে ভারতে। যার ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে নেই।
এ অবস্থায় জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় ই-মেইলে হেডার, বডি ও অন্যান্য বিয়য়ে ট্র্যাক করা সম্ভব।
আমিনুল হাকিম বলেছেন, উনাদের আইন অনুযায়ী ভারতের ওপর থেকে যেকোনো ব্যান্ডউইথ এলে উনাদের ১০০ শতাংশ ইন্টারসেপ্ট করার সক্ষমতা আছে। সাথে আইনও উনাদেরকে সহায়তা দেয়। তাহলে জাতীয় নিরাপত্তার কথা যদি বলি, নিশ্চয় দেশ বড় একটা হুমকির সম্মুখীন। তাহলে এই ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইথের যেই ধরনের ডেটা কমিউনিকেশন, অবশ্যই তারা ইন্টারসেপ্ট করতে পারে। একদিকে ব্যান্ডউইথের ঘাটতি পূরণ, অন্যদিকে নিরাপদ ইন্টারনেট সেবার জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় সরকার।
একদিকে ব্যান্ডউথের ঘাটতি পূরণ, অন্যদিকে নিরাপদ ইন্টারনেট সেবার জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের উদ্যোগে ২০২৬-এর জুনের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার কাজ চলছে। সিঙ্গাপুর থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত জলসীমায় ক্যাবল স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।
তবে রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশ জলসীমায় ক্যাবল স্থাপনের জন্য জাহাজ প্রবেশের অনুমতি মিলছে না। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও এখনও তাতে সাড়া দেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সিডিনেটের সিইও মশিউর রহমান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগে কোস্টগার্ড ও এনএসআই— এই দুইটা এজেন্সি থেকে আমাদের নো অবজেকশন নিতে হয়। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই তিনটা অনুমতি নেয়া হয়ে গেলে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে আমাদের ক্যাবলটা একেবারে ইন সার্ভিসে নিয়ে আসতে পারবো।
বেসরকারি উদ্যোগে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও বিধি নিষেধ নেই বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেছেন, আমাদের ব্যান্ডউইথ আমদানিটা এককভাবে ভারত নির্ভর হয়ে যাচ্ছে আরকি! কোম্পানিগুলো যখন বেসরকারি সাবমেরিন কেবল কোম্পানিতে ক্যাবল আনবে তারা যাতে সিকিউর ইন্টারনেটের যে কনসেপ্টটা আছে এবং রিজিওনাল যেই বিষয়গুলো আছে সেগুলো পূরণ করেই তারা আনবে। আমাদের ওপরে তাদের বাধা-নিষেধ সেভাবে নেই।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পাশাপাশি তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দিয়েছে সরকার।