ট্রাম্প পেলেন নিক্সন ফাউন্ডেশনের ‘শান্তির স্থপতি’ পুরস্কার
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রিচার্ড নিক্সন ফাউন্ডেশনের ‘আর্কিটেক্ট অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান
বিশ্ব ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পকে রিচার্ড নিক্সন ফাউন্ডেশনের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘আর্কিটেক্ট অফ পিস’ (শান্তির স্থপতি) পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে আয়োজিত একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে ট্রাম্প এই সম্মাননা গ্রহণ করেন।
এটি রিচার্ড নিক্সনের শান্তি-কূটনীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়।
‘আর্কিটেক্ট অফ পিস’ পুরস্কারটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এই পুরস্কারের লক্ষ্য এমন ব্যক্তিদের সম্মানিত করা, যারা নিক্সনের ‘একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনের’ নীতিকে এগিয়ে নিয়ে যান। নিক্সনের চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান কূটনৈতিক ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ওভাল অফিসে সীমিত পরিসরের অনুষ্ঠান
পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানটি ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ট্রিশিয়া নিক্সন কক্স (নিক্সনের কন্যা), রবার্ট ও’ব্রায়েন (ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান) এবং জিম বাইরন (যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকটিং আর্কিভিস্ট)।
অনুষ্ঠানে ট্রাম্প নিক্সন পরিবারের সদস্যদের হোয়াইট হাউসের “ওয়াল অফ প্রেসিডেন্টস”-এ নিক্সনের প্রতিকৃতি দেখান। পরে রোজ গার্ডেনে আয়োজিত লাঞ্চে তিনি বলেন, “আমরা সাত মাসে আটটি যুদ্ধের ইতি টেনেছি — এটা ওয়াশিংটন বা লিঙ্কনও পারেননি।”
ট্রাম্পের বিদেশনীতি ও পুরস্কার প্রাপ্তির কারণ
রিচার্ড নিক্সন ফাউন্ডেশন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর শান্তি উদ্যোগগুলোকেই পুরস্কারের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে—
আব্রাহাম অ্যাকর্ডস: ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি: নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণার ঠিক আগে মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা।
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের অবসান: ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ৭ মাসে ৮টি যুদ্ধ শেষ করা হয়েছে।
ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র সমর্থন: বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে সমর্থন, যিনি এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
রবার্ট ও’ব্রায়েন বলেন, “ট্রাম্পের কূটনৈতিক ফলাফল অবিশ্বাস্য — তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তির সংখ্যা অভূতপূর্ব।”
এই পুরস্কার ট্রাম্পকে মার্কিন ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থান দিয়েছে, যিনি এটি পেয়েছেন — এবং একমাত্র বর্তমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এ সম্মান লাভ করেছেন।
পূর্ববর্তী বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ (২০০০), জর্জ ডব্লিউ. বুশ (২০২৪), হেনরি কিসিঞ্জার (১৯৯৬ ও ২০২২), ডোনাল্ড রাম্সফেল্ড, ডিক চেনি, জন ম্যাককেইন এবং সম্প্রতি ইরানের সাবেক রানী ফারাহ পাহলভি ও তার পুত্র রেজা পাহলভি।
সমর্থকরা এই পুরস্কারকে ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগের যথাযথ স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন। তবে সমালোচকরা একে “নিক্সনের বুবি প্রাইজ” বলে কটাক্ষ করেছেন, বিশেষত ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ার পরই এই ঘোষণা আসায়।
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুঙ নোবেল কমিটিকে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ট্রাম্প নিজেও বলেন, “আমরা শান্তি ফিরিয়ে এনেছি, আমেরিকা আবার শক্তিশালী।”
এই পুরস্কার নিক্সনের উত্তরাধিকারের সাথে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির মিল তুলে ধরে। উভয়ের লক্ষ্য ছিল— “সম্মানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা” (Peace with Honor)।
ট্রাম্পের এই অর্জন তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সূচনালগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।