৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ও ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার: কীভাবে রক্ষা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক?

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার গুরুত্ব: পিআরআই সেমিনারে বক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

টুইট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার ও এর প্রভাব নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অপরিহার্য হলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া তা কার্যকর হবে না।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুদহার ও ডলারের দাম নির্ধারণ, কয়েকটি পরিবারের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ এবং অদৃশ্য ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানের ফলে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এবং ১৮–২০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৪ লাখ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

সেমিনারটি মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০ থেকে দুপুর ১:৩০ পর্যন্ত রাজধানীর গুলশানের আমারি হোটেলের ইডেন গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউকেআইডি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ সভা সঞ্চালনা করেন এবং চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার সমাপনী বক্তব্য দেন।

পিআরআই বাংলাদেশের একটি প্রমুখ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং অর্থনৈতিক নীতি, ম্যাক্রোইকোনমিক্স ও উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা করে। সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, খেলাপি ঋণ এবং মুদ্রা পাচারের সমস্যা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

সেমিনারে বিভিন্ন বক্তা ব্যাংক খাতের সমস্যার সঙ্গে সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি কখনো রাজনৈতিক নিয়োগ দেয়নি। ২০০৩ সালে অর্থনৈতিক সংস্কার আনা হয়েছিল, যার সুফল এখনও অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দিইনি।” এছাড়া তিনি অর্থনীতিকে অটোমেশন ও ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে উন্নীত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি সহায়তা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুদহার ও ডলারের দাম নির্ধারণ হয়েছে, যার কারণে ১৮–২০ বিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা ঘটেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতের সব সূচক খারাপ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংককে দুর্বল করেছে। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক খাত পুরো অর্থনীতির প্রাণ। এটি উদ্ধার না করলে অর্থনীতির গতি ফিরানো যাবে না।” তিনি ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে নাসিম মঞ্জুর, সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্য শিল্প নেতারা গভর্নর নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দেওয়ার এবং ব্যাংকিং খাতের অটোমেশন ও শেয়ারবাজার উন্নয়নের সুপারিশ দেন।

বক্তারা একযোগে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই স্বাধীনতা কার্যকর হবে না। তারা বলেন, শেয়ারবাজার ও কর ব্যবস্থার উন্নতি না হলে সব চাপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর পড়বে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে না।

সেমিনারটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। বিএনপির প্রতিনিধিত্বে আমীর খসরুর বক্তব্য রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করেছে, যা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। পিআরআইয়ের এই উদ্যোগ অর্থনৈতিক সংস্কারে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। সেমিনারের লাইভ সম্প্রচার ফেসবুকে করা হয়েছে এবং আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন পিআরআইয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।