বিএনপির ৩য় পর্যায়ের প্রার্থী চূড়ান্ত: তারেক রহমানের ফোনে সবুজ সংকেত
- তারেক রহমানের ফোন কল: সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠকর্ম শুরু করার নির্দেশ
- বগুড়া ও মেহেরপুরে সরাসরি নির্বাচনী প্রস্তুতি
- ঢাকায় জোটমিত্র এবং নির্দলীয় প্রার্থীর সমন্বয় চলছে
- স্থানীয় নেতৃত্ব ও জনসমর্থন ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই
টুইট প্রতিবেদক: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় পর্যায়ে (৩য় পর্যায়) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন, যা মাঠে কাজ শুরু করার ইঙ্গিত হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর নেওয়া হয়েছে, যেখানে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। দলের নেতারা জানিয়েছেন, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ৩০০ আসনের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত হবে, যদিও জোটের কারণে অন্তত ৫০ আসনে পরিবর্তন আসতে পারে।
বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমানের ফোন কল বগুড়া, মেহেরপুর এবং ঢাকার কিছু আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাকে সরাসরি ফোন করা হয়েছে। বাকিরাও ফোন পেয়েছেন, যা চূড়ান্ত মনোনয়নের ইঙ্গিত।” এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনে দল মাঠ পর্যায়ে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়েছে।
নিম্নে ৩য় পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপির চূড়ান্তকৃত প্রার্থীদের তালিকা দেওয়া হলো। তালিকায় স্থানীয় নেতা, জনসমর্থন এবং দলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। জোটমিত্রদের জন্য কিছু আসনে নির্দলীয় বা মিত্রপ্রার্থী রাখা হতে পারে।
৩য় পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। বগুড়া-১ আসনে (সারিয়াকান্দি, ধুনাটী) প্রার্থী হিসেবে কাজী রফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন, যাকে তারেক রহমান সরাসরি ফোন করে মাঠকর্ম শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। বগুড়া-৩ আসনে (বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ) আবদুল মহিত তালুকদার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন, যিনি স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থন ও আন্দোলনের নেতৃত্বের কারণে নির্বাচিত হয়েছেন। বগুড়া-৪ (দুপচাঁপিয়া, কাহালু) আসনে মোশাররফ হোসেন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন এবং জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে তার সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বগুড়া-৫ (গাবতলী, সাজানগর) আসনে জি এম সিরাজ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন এবং তারেকের নির্দেশে মাঠকর্ম শুরু করবেন।
মেহেরপুর-১ (মেহেরপুর সদর, গাংনী) আসনে প্রার্থী হিসেবে আমজাদ হোসেন মনোনীত হয়েছেন। তাকে ‘ধানের শীষ তৈরি করুন’ নির্দেশ দিয়ে জনসংযোগে ফোকাস রাখতে বলা হয়েছে। মেহেরপুর-২ (মুজিবনগর, গাংনী) আসনে মাসুদ অরুণ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি জনগণের সঙ্গে থাকার নির্দেশ পেয়েছেন, যদিও জোটের কারণে আসনে সম্ভাব্য পরিবর্তন হতে পারে।
রাজধানীর আসনগুলিতে ঢাকা-৪ (মিরপুর, কল্যাণপুর) আসনে তানভীর আহমেদ রবিন প্রার্থী, যিনি তারেকের নির্দেশে মাঠকর্ম শুরু করবেন। ঢাকা-৮ (পল্টন, খিলক্ষেত) আসনে মির্জা আব্বাস প্রার্থী, যিনি দলীয় নেতা এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য। ঢাকা-১৬ (মিরপুর, শ্যামলী) আসনে আমিনুল হক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন, যিনি মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখবেন।
জোটের অংশ হিসেবে ঢাকা-১৩ (মতিঝিল, খামারবাড়ি) আসনে ববি হাজ্জাজ মনোনীত হয়েছেন, যেখানে বিএনপির সমর্থন নিশ্চিত করা হয়েছে। ঢাকা-১৭ (রামপুরা, মগবাজার) আসনে জোটমিত্র আন্দালিব রহমান পার্থ প্রার্থী, যিনি বিজেপির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ঢাকা-১৪ (পান্থপথ, সোয়ামীবাগ) আসনে নির্দলীয় প্রার্থী রাখা হয়েছে, যা জোট বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করবে এবং চূড়ান্ত নয়।
এই প্রার্থীদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সমর্থন, জনসংযোগ, দলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জোটমিত্র এবং নির্দলীয় প্রার্থীদের সমন্বয় নিশ্চিত করে বিএনপি মাঠে সক্রিয়তার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি গতি তুলেছে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রার্থী নির্বাচনে জনসমর্থন, তরুণ-নারী-সমাজের মুরুব্বি সংযোগ এবং ক্লিন ইমেজকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুলশান অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, “মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। জোটের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্দিষ্ট আসনে নির্দলীয় প্রার্থী রাখা হচ্ছে।” দলের নেতারা আশা করছেন, এই তৎপরতা ভোটার আস্থা বাড়াবে এবং মাঠে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি দূর করা এবং আওয়ামী লীগের অপকর্ম জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য সময় লাগবে। অল্প সময়ে সব সম্ভব নয়, তাই আমরা আগাম থেকে মাঠে নামছি।” তবে জোটের কারণে কিছু আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এভাবে, ৩য় পর্যায়ের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নতুন গতিশীলতা এনেছে, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন তুলেছে এবং দলের মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তা বাড়াবে।