এমপিও শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫%: ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী উপকৃত হবেন
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত: দুই ধাপে কার্যকর, আন্দোলন প্রত্যাহার
টুইট প্রতিবেদক: দীর্ঘ আন্দোলন ও আলোচনার পর অবশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ভাতা দুই ধাপে কার্যকর হবে—প্রথম ধাপে ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ৭.৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২,০০০ টাকা) এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে আরও ৭.৫ শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২,০০০ টাকা) প্রদান করা হবে।
এই ঘোষণা প্রকাশের পর শিক্ষকরা তাদের চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করে আগামীকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি.আর. আবরার) এই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আজ শিক্ষা খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের একটি ন্যায্য দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপের ভাতা নভেম্বর থেকেই কার্যকর হবে, যেখানে সর্বনিম্ন ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,০০০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ২০২৬ সালের জুলাই থেকে মোট ১৫ শতাংশে উন্নীত হলেও সর্বনিম্ন ভাতা একই থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী উপকৃত হবেন। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশেরও কম, যা জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও আন্দোলনের জন্ম নেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় এই ভাতা বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে ছয়টি শর্তে, যাতে সিদ্ধান্তটি টেকসই ও নিয়মানুগ থাকে। শর্ত অনুযায়ী, ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সব আর্থিক বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম হলে বিল প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। এছাড়া, ভাতা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। ১৬ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন শুরু করেন তারা। বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করার দাবিতে “এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট”-এর ব্যানারে চলা আন্দোলন ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠে। আন্দোলনের নেতা অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজীসহ অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯ অক্টোবর শিক্ষকরা যমুনা সেতু অবরোধের আলটিমেটাম দিলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয় এবং অবশেষে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, “সরকার আমাদের দাবি আংশিকভাবে মেনে নিয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করছি এবং আগামীকাল থেকেই শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাচ্ছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আবরার বলেন, “এটি কারও একার অর্জন নয়—এটি সম্মান, সংলাপ এবং সহযোগিতার জয়। শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষায় এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টা (সিএ) এক বিবৃতিতে বলেন, “শিক্ষকরা নতুন উদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানচর্চার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবেন—এটাই সরকারের প্রত্যাশা।”
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের অবসান ঘটল। যদিও তাদের মূল দাবি ছিল ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, তবে ১৫ শতাংশে সমঝোতা শিক্ষক সমাজের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপ শিক্ষা খাতের স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং শিক্ষক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।