আশ্রয় প্রার্থীদের নির্মূলে ‘কঠোর’ পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন ব্লেয়ার
বিশ্ব ডেস্ক: ইংল্যান্ডের আইল অফ মালে ডিটেনশান ক্যাম্প স্থাপন এবং আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে সেখানে আশ্রয় প্রার্থীদের আটকে রাখতে চেয়েছিলো টনি ব্লেয়ার। ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত ফাইলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ‘সদ্য প্রকাশিত ২০০৩ সালের আর্কাইভ ফাইল অনুসারে, ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন টনি ব্লেয়ার ইংল্যান্ডে বাড়তে থাকা অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা থামাতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।’
যে কারণে টনি ব্লেয়ার আইল অফ মালে ডিটেশন ক্যাম্প স্থাপন করে আটকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে কঠোর হতেও প্রস্তুত ছিলেন। ২০০২ সালে রেকর্ড অভিবাসী আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন পড়ে ইংল্যান্ডের ব্লেয়ার প্রশাসনের কাছে।
আশ্রয়প্রার্থীদের কাজের অধিকার না দেয়াসহ নানান উপায়ে ব্লেয়ার সরকার আশ্রয় প্রার্থীদের কাছে ইংল্যান্ডকে কম আকর্ষণীয় করে তোলার প্রচেষ্টা চালান। তাতে কাজ না হওয়ায় সে সময় তিনি তিনি অভিবাসী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ঠেকাতে প্রচলিত আইনে আমূল পরিবর্তনের আহ্বান জানান ।
ন্যাশনাল আর্কাইভ অনুসারে, ‘একটি ব্রিফিং নোটে ব্লেয়ার লিখেছিলেন, ‘আশ্রয়প্রার্থীদের চাপ ঠেকাতে আমাদের অবশ্যই আরও কঠোর ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে।’
এমন প্রেক্ষাপটে ব্লেয়ারের চিফ অফ স্টাফ জোনাথন পাওয়েলের সভাপতিত্বে ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারী সমস্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত ধারণা তৈরির জন্য এক বৈঠকে বসেন।
‘বৈঠক থেকে যে ধারণাগুলো এসেছিল তা ব্লেয়ার প্রশাসন বাস্তবায়ন করেনি বা করতে পারেনি, তবে বিবেচনার জন্য পরামর্শ ছিল। তারা পুরো অভিবাসী সিস্টেমকে পালটে ফেলতে কয়েকটি পদক্ষেপ বিবেচনা করেছিলেন।’
প্রথমটি ছিল মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের বিপরীত আইন প্রণয়ন করা। যার অর্থ ইংল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে যা সরকারকে অবৈধ অভিবাসীদের অপসারণ করার অনুমতি দেবে।
উপদেষ্টারা এর প্রেক্ষিতে বলেছিলো, ‘এরকম আইন করা হলে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে নতুন কঠোর অবস্থান সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে পার।’
আরেকটি পরামর্শ ছিল, ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য তৃতীয় দেশে নিরাপদ আশ্রয়স্থল স্থাপন করা, কারণ নিজস্ব দেশে ফেরত দেয়া তাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
এজন্য তুরস্ক, কেনিয়া, ইরাকসহ আরও কয়েকটি কমনওয়েলথভূক্ত দেশের কথা বিবেচনা করা হয়েছিল।
উপদেষ্টাদের দেয়া সবচেয়ে কঠিন কিন্তু কার্যকরী পরামর্শ ছিল, অস্ট্রেলিয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে ডিটেনশন ক্যাম্পে আশ্রয়প্রার্থীদের আটক করা।
এ বিষয়ে উপদেষ্টারা লিখেছিলেন যে, এমনটা হলে নতুন অ্যাপ্লিকেশন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
ব্লেয়ার সরকার এ কঠোর পদক্ষেপগুলোর বাইরে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও ভিসা সংক্রান্ত অন্যান্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে আসে যা ওই সময় অভিবাসীদের ঠেকাতে বেশ সফল হয়।