সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলো কালী পূজা: বান্দরবানে উৎসবের আমেজ
সারাদেশে উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হওয়া বাংলাদেশের বহুসাংস্কৃতিক সমাজের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
অসীম রায় (অশ্বিনী): হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব কালী পূজা বা শ্যামা পূজা সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়েছে। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই উৎসব উপলক্ষে মন্দির, আশ্রম এবং ঘরে ঘরে দীপাবলির আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে চারদিক।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের বহুমাত্রিক আয়োজন দেখা গেছে, যেখানে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম এবং কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দিরে পূজা-অর্চনা, শ্যামাসঙ্গীত এবং প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে উদযাপন হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা উৎসবকে আরও সুষ্ঠু করে তুলেছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, কালী দেবী দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের প্রতীক। এই উৎসবে ভক্তরা নৈবেদ্য প্রদান, মঙ্গল শিখা প্রজ্বলন এবং দীপাবলির মাধ্যমে অন্ধকার দূর করে আলোর প্রতীকী জয় কামনা করেন। বেশিরভাগ দেব-দেবীর পূজা দিনে হলেও কালী পূজা রাত্রিকালীন, বিশেষ করে নিশীথকালে (মধ্যরাত্রি)।
২০২৫ সালে এই পূজা ২০ অক্টোবর সোমবার পালিত হয়েছে, যেখানে নিশীথ পূজা সময় ২০ অক্টোবর রাত ১১:৪১ থেকে ২১ অক্টোবর ভোর ১২:৩১ পর্যন্ত ছিল। উৎসবের পরদিন অন্নকুট মহোৎসব এবং ভাইফোঁটা পালিত হয়, যা ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করে।
বাংলা সংস্কৃতিতে কালী পূজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যা রামপ্রসাদ, বামাখ্যাপা এবং রামকৃষ্ণদেবের মতো সাধকদের সাথে যুক্ত। শ্যামাসঙ্গীত ছাড়া এই উৎসব অসম্পূর্ণ, এবং ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’ মন্ত্রের মতো প্রচলিত উচ্চারণ এর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। বাংলাদেশে এই উৎসব দুর্গা পূজার পরের অমাবস্যায় প্রধানত পালিত হয়, যা পাড়া-কেন্দ্রিক এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক।
বান্দরবানে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দিরে শ্রীশ্রী শ্যামা মায়ের পূজার আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে পূজামণ্ডপ সাজানো হয়েছে, যেখানে সন্ধ্যায় দীপাবলি, মঙ্গল শিখা প্রজ্বলন এবং রাতে পূজা-অর্চনা চলে। বিভিন্ন সংগঠন নানা ধর্মীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে সার্বজনীন শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা ২০২৫ অন্যতম।
‘অসত্যে মা সদাময় তমসো মা জ্যোতির্গময়’—এই মন্ত্রের সাথে কালীমা দূর করার অভিপ্রায়ে উৎসব পালিত হয়েছে। বান্দরবানের পাহাড়ি পরিবেশে এই উৎসব স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ ঘটায়, যা সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা বাড়ায়।
সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পালন
সারাদেশে কালী পূজা ধর্মীয় উৎসাহ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় মন্দির এবং সম্প্রদায়িক স্থানে পূজা-অর্চনা চলে। বাংলাদেশ হিন্দু মন্দিরের উদ্যোগে ২০ অক্টোবর কালী পূজা উদযাপিত হয়েছে। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুসারে, দেশজুড়ে উৎসব ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়েছে।
এক্স প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার এবং হাই কমিশনারের পোস্টে উৎসবের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে, যা ভাইফোঁটা এবং দীপাবলির সাথে যুক্ত। যদিও কিছু ছিটমহল ঘটনা যেমন চট্টগ্রামে একজন সাংবাদিকের উপর হামলার খবর উঠেছে, সামগ্রিকভাবে উৎসব শান্তিপূর্ণ ছিল।
সরকারের সহযোগিতা
বাংলাদেশ সরকার হিন্দু উৎসবগুলোতে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করে চলেছে। দুর্গা পূজার মতো কালী পূজাতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সরকার দুর্গা পূজার জন্য অনুদান ৫ কোটি টাকায় বাড়িয়েছে, এবং ৮০,০০০ কর্মকর্তা এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করেছিলেন নিরাপত্তার জন্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শান্তিপূর্ণ পূজা পালনের জন্য ধর্মীয় এবং গৃহমন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছে। সমাজীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত, যা কালী পূজাকেও নিরাপদ করে তুলেছে।
কালী পূজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং আলোর জয় এবং সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতীক। বান্দরবানসহ সারাদেশে এই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের বহুসাংস্কৃতিক সমাজের প্রতিফলন। সরকারের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে এমন উৎসব আরও সুন্দরভাবে পালিত হবে বলে আশা করা যায়।