১৯০০ সালের শাসনবিধি অপ্রচলিত: বান্দরবান নাগরিক পরিষদের দাবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বার্থে বান্দরবানে মতবিনিময় সভা: ১৯০০ সালের শাসনবিধি ‘অপ্রচলিত’ দাবি।

বান্দরবান প্রতি‌নি‌ধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বান্দরবানে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভাটি প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে।

সভায় বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, “১৯০০ সালের শাসনবিধি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চলতে পারে না”। তাঁদের দাবি, এই আইনটি বর্তমানে অপ্রচলিত এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সভা শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের বাঙালি সদস্যদের ছাড়া একপাক্ষিক বৈঠক বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি অর্পণ করা হয়।

জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি সভায় বলেন, নাগরিক পরিষদ ও ছাত্র পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে তাঁর আওতাধীন বিষয়গুলো অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে এবং বাকি বিষয়গুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হবে।

১৯০০ সালের শাসনবিধি নিয়ে বিতর্ক

সভায় বক্তৃতাকালে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার ইলিয়াসুর রহমান বলেন, “এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন এখন অপ্রাসঙ্গিক।”
তিনি জানান, এই আইন বাতিলের জন্য তাঁরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। যদিও সাম্প্রতিক রায় অনুযায়ী আইনটি এখনো কার্যকর ধরা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাজপ্রথা বা জমিদারি নেই, তাই ‘রাজা’ বা সার্কেল চীফের আইনগত অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ।

এই আইন মূলত উপজাতীয় প্রজাদের কাছ থেকে জমি-সংক্রান্ত খাজনা (জুম) আদায়ের জন্য প্রণীত হয়েছিল। বর্তমানে সার্কেল চীফদের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ প্রদান বা জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনুমতি নেওয়ার প্রথা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

৮ দফা দাবি উপস্থাপন

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবুর রহমান সভায় ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবি হলো—
১. ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিল,
২. উদ্বাস্তু পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের একপাক্ষিক সভা বন্ধ,
৩. সার্কেল চীফদের অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ,
৪. স্থায়ী বাসিন্দা সনদ প্রদানে বৈষম্য দূর করা,
৫. ভূমি কমিশন কার্যকর করা,
৬. পাহাড়ে বাঙালিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
৭. প্রশাসনিক পদে বৈষম্য দূরীকরণ,
৮. উন্নয়ন প্রকল্পে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি।

জেলা প্রশাসক জানান, দাবিগুলোর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের আওতাধীন বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং বাকি দাবিগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল ইসলাম ও আবু তালেব, নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার ইলিয়াসুর রহমান, এডভোকেট আবু জাফর, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রশিদ, প্রেস ক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম সওদাগর, যুব পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি আসিফ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হোসেন, প্রচার সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা আজিজুর রহমান, সাংবাদিক মোজাম্মেল হক লিটন প্রমুখ।