জুবায়েদ হত্যা: প্রেম না ষড়যন্ত্র? সারাদেশে ছাত্রদলের ব্যানারে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যা: প্রেমঘটিত নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ও জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

টুইট প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জুবায়েদ হোসেনকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশের ছাত্রসমাজ।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি প্রেমঘটিত জটিলতার কারণে ঘটতে পারে, তবে ছাত্র রাজনীতির অন্তর্দ্বন্দ্ব বা পরিকল্পিত হত্যার দিকেও তদন্ত চলছে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে আরমানিটোলা এলাকায় একাধিক ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন জুবায়েদ হোসেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে এক তরুণী উপস্থিত ছিলেন, যাকে পরে পুলিশ আটক করে। তার নাম বর্ষা আক্তার, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র জানায়, জুবায়েদ ও বর্ষার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই সম্পর্কের জটিলতা থেকেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, “এখনই একে পুরোপুরি প্রেমঘটিত বলা যাচ্ছে না। অন্য কোনো প্ররোচনা বা পরিকল্পিত হত্যার বিষয়ও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত মামলা দায়ের হয়নি, তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রস্তুতির কথা জানা গেছে।
পুলিশ হত্যার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

ছাত্র রাজনীতিতে নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভ

জুবায়েদ হোসেন ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী এবং পরিসংখ্যান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত। তার মৃত্যুর খবরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট ও সংগঠনের নেতারা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ও জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
রাজশাহী কলেজের ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “আমরা জুবায়েদের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। পুলিশ যদি দোষীদের আড়াল করে, তাহলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

সারাদেশে প্রতিবাদের ঢেউ

আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী কলেজে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও শোক মিছিল করেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ছাত্ররা কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “জুবায়েদ ভাই শুধু ছাত্রদল নেতা ছিলেন না, তিনি একজন মানবিক মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি

জুবায়েদের পরিবার বলছে, এটি কোনো সাধারণ প্রেমঘটিত ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তার বড় ভাই বলেন, “আমার ভাইকে ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”

সহপাঠীরাও বলছেন, জুবায়েদ রাজনীতি করলেও কখনো সহিংসতায় জড়াননি। তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ও সংগঠিত নেতৃত্ব গড়ে তোলার পক্ষে ছিলেন।

এখন তদন্তে নতুন দিক উন্মোচনের অপেক্ষা কর হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক বর্ষা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং বলেন, “আমি কোনো কিছু জানতাম না, হঠাৎ করে ঘটনা ঘটে যায়।”

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কল রেকর্ড ও জুবায়েদের সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলো যাচাই করা হচ্ছে।

তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হবে বলে পুলিশের আশাবাদ।

জুবায়েদ হোসেনের এই মৃত্যু ছাত্রসমাজে শুধু শোকই নয়, ভয়ের সঞ্চার করেছে। প্রেমঘটিত বা পরিকল্পিত—যেভাবেই ঘটুক, এই হত্যাকাণ্ড নৃশংসতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে।

সবাই আশা করছে, পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত সত্য বের করবে এবং হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে।