লাইন অফ কন্ট্রোলে দীপাবলির আলো: ভারতীয় সেনার শান্তি বার্তা

LoC-এর সৈনিকদের দীপাবলি উদযাপন: পাকিস্তান সীমান্তের ঠিক সামনে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা!

বিশ্ব ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের আখনূর সেক্টরে লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC)-এ মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈনিকরা দীপাবলির আলোয় উদযাপন করেছেন। পাকিস্তান সীমান্তের ঠিক সামনে, গুলির আওয়াজের মধ্যেও তারা প্রদীপ ও ফটকি ফোটিয়ে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়েছেন।

এই দৃশ্যটি এনআই (ANI) নিউজ এজেন্সি দ্বারা প্রচারিত ভিডিওতে ধরা পড়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে।

দীপাবলির উৎসব রাম-সীতার অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিতে উদযাপিত হলেও আখনূরের দুর্গম পাহাড়ে এবার এটি নতুন অর্থ পেয়েছে। ১৯ অক্টোবর রাতে সেনানিবাসে সৈনিকরা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে, আকাশে ফটকি ফাটিয়ে উদযাপন করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, সৈনিকরা হাতে প্রদীপ নিয়ে নাচছেন, গান গাইছেন এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। LoC-এর উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে এই দৃশ্য এক শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের আখনূর সেক্টর LoC-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে রবী নদী প্রবাহিত এবং চারপাশে পাহাড় ও জঙ্গল রয়েছে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের পর নিয়মিত সীমান্ত অতিক্রমণ ও গোলাবর্ষণ হয়ে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ১৬ বেসামরিক নিহত হলেও ভারতীয় সেনার দৃঢ়তার কারণে এলাকা এখন তুলনামূলক শান্ত। ১৫তম কর্পস মোতায়েন রয়েছে, ২০০০+ সৈনিক সীমান্ত রক্ষা করছেন।

দীপাবলি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং শান্তি ও বিজয়ের প্রতীক। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্বাধীনতার পর থেকে সৈনিকরা উৎসব উদযাপন করে। পরিবার থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও এটি সৈনিকদের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতি জাগায়। ২০২৪ সালে লাদাখের DBO-তে -৩০ ডিগ্রিতে উদযাপন সেই ঐতিহ্যের অংশ। ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা থাকায় উৎসব আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে।

এই বছরের উদযাপনের মধ্যে ছিল ১০০০+ মাটির প্রদীপ সাজানো, নিরাপদ সবুজ ফটকি ফোড়া, হালুয়া ও লাড্ডু বিতরণ, সৈনিকদের গান ও নাচ এবং পরিবারের জন্য ভিডিও লাইভ স্ট্রিম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিতাভ বচ্চন এবং বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ অনেকেই তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই উদযাপন LoC-এর উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে এবং সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকার পরিকল্পনা করছে ২০২৬ সালে ‘শান্তি দীপাবলি’ আয়োজন, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দীপাবলির আলো শুধু অন্ধকার দূর করছে না, সীমান্তেও শান্তির বার্তা জাগাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক।

সূত্র: (ANI, ভারতীয় সেনাবাহিনী স্টেটমেন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া তথ্যভিত্তিক)