সেনাপ্রধান-কুয়েতি মন্ত্রীর বৈঠক: কর্মসংস্থানের নতুন পথ

কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ: সামরিক সহযোগিতা ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন।

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্যে আজ র‌বিবার সেনাসদরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত এইচ ই সমীহ এসা জোহর হায়াতের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

এই সাক্ষাতে দুই দেশের সামরিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যৌথ প্রশিক্ষণ, এক্সারসাইজ এবং সেমিনারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যা বাংলাদেশ-কুয়েত সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সাক্ষাতকালে কুয়েতে বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হয়েছে।

সেনাসদরের সামরিক বেদিতে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু হলেও, আলোচনার মূল ফোকাস ছিল দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতার প্রসারণের উপায়।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং হায়াত মহাশয় যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন, যা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে। এছাড়া, যৌথ এক্সারসাইজ এবং সেমিনারের মাধ্যমে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত কৌশল গ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়। এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নয়ন এবং কুয়েতের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সাক্ষাতকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এইচ ই আলি তুনিয়ান আব্দুল ওয়াহাব হামাদাহ, যিনি এই সাক্ষাতের সাক্ষী হিসেবে দুই দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। হামাদাহর উপস্থিতি এই সাক্ষাতকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে, কারণ তিনি বাংলাদেশ-কুয়েত সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসেবে পরিচিত।

এই সামরিক সাক্ষাতের পাশাপাশি আজই ঢাকায় বাংলাদেশ ও কুয়েতের প্রথম দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্র দপ্তরীয় সমন্বয়ক (ফরেন অফিস কনসালটেশনস-এফওসি) আয়োজিত হয়েছে। এই সমন্বয়কে যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (দ্বিপাক্ষিক) সচিব ড. এমডি নাজরুল ইসলাম এবং কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমীহ এসা জোহর হায়াত। এই সমন্বয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, শ্রম, উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্য গঠিত হয়েছে। বিশেষ করে, শ্রম এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কুয়েতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।

কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াত বাংলাদেশি মানবসম্পদের প্রতি কুয়েতের উচ্চ মূল্যায়ন প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশি শ্রমিকরা কুয়েতের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোর দেন। বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই উদ্যোগগুলো দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং বিদেশি মুদ্রা প্রবাহ বাড়াবে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ ও কুয়েতের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। ১৯৭৬ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশ বাণিজ্য, শ্রম প্রবাহ এবং কূটনৈতিক সহযোগিতায় অগ্রগতি লাভ করেছে। বর্তমানে কুয়েতে প্রায় ৩ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন, যারা দেশের রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ সরবরাহ করেন। আজকের এই সাক্ষাত এবং সমন্বয় সেই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌথ সামরিক উদ্যোগগুলো এশিয়ান অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যখন কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো বাংলাদেশের যুবকদের জন্য নতুন দরজা খুলে দেবে।

সেনাপ্রধানের অফিস থেকে জানা গেছে, এই সাক্ষাতের ফলস্বরূপ শীঘ্রই যৌথ কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে, যা সামরিক সহযোগিতার রোডম্যাপ তৈরি করবে। এছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগামী মাসগুলোতে শ্রম চুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করা হবে।

আজকের এই ঘটনা বাংলাদেশ-কুয়েত সম্পর্কের একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা দুই দেশের জনগণের জন্য উভয়পক্ষে লাভজনক ফলাফল আনবে।