বিএনপি পেলো ৪ বুলেটপ্রুফ যানবাহনের অনুমতি: নির্বাচনী নিরাপত্তায় নতুন অধ্যায়
বিএনপির জন্য চারটি বুলেটপ্রুফ যানবাহনের অনুমতি: নির্বাচনী প্রস্তুতিতে জোরদার হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
টুইট প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চারটি বুলেটপ্রুফ যানবাহন কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত থাকবে। অপর দুটি বুলেটপ্রুফ মিনি বাস দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি, দলটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও আবেদন করেছে, যা এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে প্রথম একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি দেওয়া হয়। পরে অক্টোবরের শুরুতে আরও একটি বুলেটপ্রুফ মিনি বাস কেনার অনুমোদন মেলে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট চারটি যানবাহন কেনার অনুমতি এখন কার্যকর।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনগুলো জাপান থেকে আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত মডেল, সরবরাহকারী দেশ কিংবা আমদানির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই বুলেটপ্রুফ যানবাহন কেনা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন দলের অগ্রাধিকারের বিষয়।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্যই বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। সচরাচর দেওয়া হয় না এমন অনুমতি।
তাঁরা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে—বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর—বিএনপি নেতৃত্বের ওপর হামলার আশঙ্কা বেড়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আক্রমণ বা সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) তথ্য অনুযায়ী, বুলেটপ্রুফ যানবাহন সাধারণত জাপান, কানাডা ও জার্মানি থেকে আমদানি করা হয়।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক জানান, “বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনতে পারেন না; সরকারের অনুমতি লাগেই। প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ২ লাখ ডলার। আর ৮০০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকা।”
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, তিনি শিগগির দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন।
২০১৫ সালে তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার পর থেকেই বিএনপি নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। সেসময় তাঁর গাড়িটি বুলেটপ্রুফ ছিল না এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা তা ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দলটির নির্বাচনমুখী কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং দলটির মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে নেতৃত্বের সক্রিয় অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “বুলেটপ্রুফ যানবাহনের অনুমতি বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি বড় পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন বার্তা বহন করছে।”