দুই বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে ৯ শতাংশ: পিপিআরসি

টুইট ডেস্ক: দেশে দারিদ্র্যের হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্য বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি চারজন বাংলাদেশির একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ বর্তমানে “ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে” রয়েছে- অর্থাৎ তারা যেকোনো সময় দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। পিপিআরসি মনে করছে, দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি, সীমিত কর্মসংস্থান, এবং আয়ের স্থবিরতাই দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে মানুষের আয় না বাড়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও উৎপাদন খাতের সংকোচন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, “ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে সুদের হার কমানো গেলে উৎপাদন বাড়বে, আমদানি নির্ভরতা কমবে, ফলে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্থায়ী সমাধান হলো বিনিয়োগ বাড়ানো, শুধু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়।”

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার শহরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো মুদ্রাস্ফীতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে প্রায় চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে- অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমানের বিভিন্ন সূচকে তারা পিছিয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আয়ের উৎস বহুমুখী করা, শিল্পখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং শ্রমবাজার সম্প্রসারণের দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণের বৃহৎ অংশের কাছে পৌঁছাবে না।