‘মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা’

টুইট ডেস্ক: চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন।

এছাড়া নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্যমতে, তার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের সময়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কারবিরোধী বিক্ষোভ পরিণত হয় দেশজুড়ে গণআন্দোলনে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। সেদিন ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তাদের কাছে ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ ও সাক্ষ্য রয়েছে যা শেখ হাসিনাকে হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে। তার দাবি, “আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে তিনি দোষ স্বীকার করেছেন। তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালানো হয়।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা সম্ভব নয়, আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড চাই।” তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা এবং তিনি কখনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।

রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা। নভেম্বরের মধ্যভাগে রায় ঘোষণা হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দাবি, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সহিংস হামলার জবাবেই গুলি চালায়। শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতির মামলাও চলছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে, তার ভাতিজি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও বর্তমানে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শেখ হাসিনার প্রভাব ব্যবহার করে পরিবারের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দে অনিয়ম করেছেন- যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, যেখানে বিএনপি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।