বান্দরবানে হিল হাফ ম্যারাথন ২০২৫: পাহাড়ে দৌড়
বান্দরবান হিল হাফ ম্যারাথন ২০২৫: পাহাড়ি পথে ছয়শো রানারের উদ্দাম দৌড়, পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়ালো রাজার মাঠে।
অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠ আজ শনিবার ভোরে উদ্দাম উল্লাসে মুখরিত হয়েছে। ‘দৌড়াবো পাহাড়ে, বাঁচাবো পাহাড়কে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত ‘বান্দরবান হিল হাফ ম্যারাথন ২০২৫ (সিজন-২)’ শুরু হয়েছে সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে।
দেশের ৬৪টি জেলা থেকে প্রায় ছয়শো ক্রীড়াপ্রেমী অংশ নিয়ে এই রোমাঞ্চকর ইভেন্ট শেষ হয়েছে সন্ধ্যায়, যা কেবল একটি দৌড় নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাহাড়ি সংস্কৃতির প্রচারের এক মহান উৎসব হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আয়োজক ‘বান্দরবান হিল রানার্স’ কমিউনিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই দ্বিতীয় সিজনের ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীরা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, ঘন জঙ্গল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে দৌড়ে গেছে। প্রতিযোগিতায় দুটি ক্যাটাগরি ছিল—২১.১ কিলোমিটারের হাফ ম্যারাথন অভিজ্ঞ রানারদের জন্য এবং ১০ কিলোমিটারের মিনি ম্যারাথন নতুনদের জন্য। চ্যালেঞ্জিং ট্রেল এবং উঁচু-নিচু পথ সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীরা উল্লাসের সঙ্গে লক্ষ্য অর্জন করেছে। আয়োজকদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ছয়শোরও বেশি রানারের অংশগ্রহণ এই ইভেন্টকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা এই ম্যারাথনকে শুধু ক্রীড়া ইভেন্ট নয়, একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক নিবন্ধিত রানারকে দেওয়া হয়েছে একটি গাছের চারা, যা পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক। এছাড়া কাস্টমাইজড মেডেল, টি-শার্ট, দৌড়কালীন খাবার-হাইড্রেশন সাপোর্ট এবং জরুরি মেডিকেল সুবিধা অংশগ্রহণকারীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ইভেন্টের সময় বান্দরবানের ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশনা দর্শক এবং রানারদের মুগ্ধ করেছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে।
আয়োজক সংগঠনের প্রতিনিধি মো: আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “বান্দরবান হিল হাফ ম্যারাথন ২০২৫ শুধু একটি দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, এটি পাহাড়, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক। গত এপ্রিলের প্রথম সিজনের সাফল্যের পর এবার আমরা আরও বড়ভাবে আয়োজন করেছি। পরিবেশবান্ধব পর্যটন, পানি সংকট সচেতনতা এবং পাহাড়ি জীবনযাত্রার প্রচারের মাধ্যমে এটিকে একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের। আমরা সবাইকে এই অনন্য অভিজ্ঞতার অংশ হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।”
এই ইভেন্টে সহযোগিতা করেছে প্রো, স্টাসলিকা, মর্নিং সান রানার্স নেট্রোকোনা, চট্টগ্রাম, পাহাড়বার্তা, দলছুট, ডিওয়াইডিএফ ধ্রুবোতারা ইয়ুথ, সিআর কুমিল্লা রানার্স এবং বান্দরবান ইউনিভার্সিটি। গিফট, ডিজাইন ও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত আছে এইমাত্র ও সিওয়াইও, দৈনিক নিরপেক্ষ, দৈনিক পাহাড় সমুদ্র, টুইট নিউজ২৪, দ্য ডেইলি ফ্রন্ট নিউজ এবং দ্য ডেইলি অভয়নগর।
ম্যারাথন শেষে অংশগ্রহণকারীরা নিজ খরচে বান্দরবানের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নীলগিরি, নীলাচল ও চিম্বুক পাহাড়, ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্ট, শৈলপ্রপাত, দেবতা খুম, স্বর্ণমন্দির, প্রান্তিক লেক এবং মেঘলা। এই স্থানগুলো শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়, বান্দরবানের পর্যটন সম্ভাবনার উজ্জ্বল নিদর্শন।
আয়োজকরা আশাবাদী যে, এই ইভেন্ট দেশ-বিদেশে বান্দরবানের সৌন্দর্য তুলে ধরবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। ক্রীড়াপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি ছিল এক অনন্য সুযোগ, যা বান্দরবানকে অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করার পথ প্রশস্ত করেছে।