বর্তমান সরকারের কাউন্টডাউন শুরু?

জুলাই সনদ বিতর্ক, আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ, অর্থনৈতিক সংকট ও প্রশাসনিক বিভক্তি—সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির আগেই ভাঙনের মুখে বর্তমান সরকার।

টুইট প্রতি‌বেদক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক সময়রেখা যেন এক অনিশ্চিত কাউন্টডাউনে প্রবেশ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—বর্তমান সরকার ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

আন্দোলন, বিরোধী চাপ, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দ্বিধা—সব মিলিয়ে সরকারের ‘কাউন্টডাউন’ শুরু হয়ে গেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধীদের চাপ

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বর্তমানে জাতীয় ঐক্যমত্তা কমিশন ও তার সঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন কর‌ছেন। তবে জুলাই আন্দোলনের আহতদের নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে সংঘর্ষ, জুলাই সনদ বিতর্ক, এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ধারাবাহিক সমালোচনা সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করেছে এবং আন্দোলন ক‌ঠোর আকার ধারন কর‌তে পা‌রে।

ছাত্র সংগঠনগুলো এবং বামজোট এখন এক কণ্ঠে বলছে—“এই সরকার ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকবে না।” তাদের মতে, সরকার জনআস্থা হারাচ্ছে এবং প্রশাসনের মধ্যেও সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে।

মানবাধিকার ইস্যু ও আন্তর্জাতিক চাপ

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনী পরিবেশে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।

শুক্রবার ১৭ অ‌ক্টোবর ঢাকায় জুলাই যোদ্ধাদের উপর লাঠিচার্জ এবং কৃত্রিম হাত খুলে পড়ার ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সরকার আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে “রাষ্ট্রীয় সহিংসতার নতুন রূপ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

অর্থনৈতিক বাস্তবতা: টেকার চেয়ে ভাঙনের ঝুঁকি

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক দলিলগুলোতে স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন দেশের অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, “যদি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তাহলে সরকারের আর্থিক কৌশলও ব্যর্থ হবে।”

ভেতরের ফাটল ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মতবিরোধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের সময়সূচি, প্রার্থী মনোনয়ন ও সংস্কার নীতিমালা নিয়ে ঐকমত্যের অভাব তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রশাসনের ভেতরের এই ফাটলই সরকারের টেকার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ট্রেন্ড করছে #CountdownBegins এবং #FebruaryTooFar হ্যাশট্যাগ। হাজারো তরুণ লিখছে—“জুলাই আন্দোলন শেষ হয়নি, শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতীকী প্রতিবাদ তৈরি হয়েছে, তা সহজে স্তিমিত হবে না। বিশেষ করে আতিকুল ইসলামের কৃত্রিম হাতের ঘটনাটি জনমতের তীব্র প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ফেব্রুয়ারির আগে নতুন সমীকরণ

রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে—বাংলাদেশ এখন আর শুধু নির্বাচনের অপেক্ষায় নেই; এটি এক অস্থির পরিবর্তনের অপেক্ষায়।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকে থাকতে চাইলে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—দমন নয়, সমঝোতার পথে যাবে কি না। অন্যথায় “কাউন্টডাউন” হয়তো ফেব্রুয়ারির আগেই শেষ হয়ে যাবে।