বান্দরবান মা ও শিশু কেন্দ্রে ইউএনএফপিএ ও সুইডিশ দূতাবাসের সফর
বান্দরবান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সুইডিশ দূতাবাসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ইউএনএফপিএ দলের ঐতিহাসিক পরিদর্শন।
বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বান্দরবান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে।
১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকালে সুইডিশ দূতাবাসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, সুইডিশ দূতাবাস বাংলাদেশ এবং ইউএনএফপিএ (জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল)-এর প্রতিনিধি দল এই কেন্দ্রে পরিদর্শন করেন। এটি এই কেন্দ্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন উচ্চপদস্থ আন্তর্জাতিক দূতাবাসী ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সফর, যা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই পরিদর্শনটি স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মা-শিশু স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের গভীরতর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে।
পরিদর্শনের পটভূমি ও গুরুত্ব
বান্দরবান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মা-শিশু স্বাস্থ্য, প্রসব-প্রসূতি সেবা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাধারণ চিকিত্সা সেবা প্রদান করা হয়। এই অঞ্চলের দুর্গমতা এবং জনজাতিগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের কারণে এই কেন্দ্রটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুইডিশ দূতাবাস এবং ইউএনএফপিএ-এর এই পরিদর্শনটি বাংলাদেশ সরকারের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কল্পনার বাহিরে ছিল বলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করছেন, যা কেন্দ্রের কার্যক্রমকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।
পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রের সেবা ব্যবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করা। দূতাবাসী ও প্রতিনিধিরা কেন্দ্রের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে আলোচনা করেন, যাতে ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতামূলক প্রকল্প চালু করা যায়। এই সফরটি সুইডেনের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মা-শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সাহায্য করে।
উষ্ণ স্বাগত জানানো ও অনুষ্ঠানের হাইলাইটস
পরিদর্শনকালে স্থানীয় ডাক্তার, সেবিকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা দূতাবাসী ও প্রতিনিধি দলকে ফুলের মালা দিয়ে, শুভেচ্ছা বিনিময় করে এবং লাল গালিচা বিস্তার করে স্বাগত জানান। এই অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত আন্তরিক এবং উৎসবমুখর, যা স্থানীয়দের মধ্যে বিশেষ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রের কর্মীরা বলছেন, এমন উচ্চপদস্থ সফর কেন্দ্রের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এই স্বাগত অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া যোগ করা হয়েছে, যাতে পাহাড়ি জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দূতাবাসীদের সাথে স্থানীয়রা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনার ভিত্তি তৈরি করে।
পরিদর্শন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এবং সহকারী পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, বান্দরবান। তিনি পরিদর্শনের সমন্বয়কার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং দূতাবাসীদের সাথে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ডা. কামরুল মনির রিবন: মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, বান্দরবান। তিনি কেন্দ্রের ক্লিনিক বিভাগ পরিদর্শন করিয়ে দেন এবং মা-শিশু স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
মোঃ ইউসুফ নবী: ফ্যাসিলেটর, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, বান্দরবান। তিনি স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন।
এছাড়াও, কেন্দ্রের সকল স্টাফ সদস্য এবং বিভিন্ন এনজিও (-সরকারি সংস্থা) কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলে একসাথে দূতাবাসীদের সাথে আলোচনায় অংশ নেন এবং কেন্দ্রের দৈনন্দিন কার্যক্রমের প্রদর্শনী দেখান। এই উপস্থিতি কেন্দ্রের দলীয় কাজের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই পরিদর্শনের ফলে সুইডিশ দূতাবাস এবং ইউএনএফপিএর সাথে বান্দরবানের স্বাস্থ্য খাতে নতুন সহযোগিতার পথ খুলে গেছে। সম্ভাব্যভাবে, মা-শিশু স্বাস্থ্যসেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং সরঞ্জাম সরবরাহের প্রকল্প চালু হতে পারে। স্থানীয় কর্মীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এটি কেন্দ্রের সেবা মান উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং দুর্গম এলাকার মহিলা-শিশুদের জীবনযাত্রার মান বাড়াবে।
এই ঘটনাটি বান্দরবানের স্বাস্থ্য খাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির একটি বড় মাইলফলক। আশা করা যায়, এর ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী হবে এবং মা-শিশু কল্যাণের কাজ আরও গতিময় হবে।