কঙ্গো থেকে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ দল প্রত্যাহার: জাতিসংঘের নির্দেশ
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যাহার: অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ধাক্কা।
বিশ্ব ডেস্ক: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে অভূতপূর্ব অর্থায়ন সংকটের কারণে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ অবশিষ্ট দলকে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (DRC) থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা বাংলাদেশের মতো শীর্ষস্থানীয় অবদানকারী দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
জাতিসংঘের MONUSCO (United Nations Organization Stabilization Mission in the Democratic Republic of the Congo) মিশনের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশের Formed Police Unit (FPU) দলটি দক্ষিণ কিভু (South Kivu) অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। এই দলে প্রায় ১৮০ জন কর্মী ছিলেন, যার মধ্যে ৭০ জন মহিলা অফিসারও অন্তর্ভুক্ত। তারা গত ২৬ আগস্ট ২০২৫-এ কঙ্গো রওনা দিয়েছিলেন, কিন্তু মাত্র দু’মাসের মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ পেয়েছেন।
এটি বাংলাদেশ পুলিশের জাতিসংঘ মিশনে ৩৫ বছরের (১৯৮৯ থেকে) অবদানের একটি বড় ধাপ। এ পর্যন্ত ২১,৮১৬ পুলিশ কর্মী মিশনে অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন শহীদ হয়েছেন।
প্রত্যাহার প্রক্রিয়া মধ্য নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, এবং MONUSCO মিশনের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ৩০ এপ্রিল ২০২৬-এর মধ্যে হবে।
অর্থায়ন সংকট ও বাজেট কমানো
জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের মূলে রয়েছে গুরুতর অর্থায়ন সংকট। যুক্তরাষ্ট্রের অবদান কমানো (বাজেটের ২৬% সরবরাহকারী) এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনের ফলে জাতিসংঘের ২.৮ বিলিয়ন ডলারের বকেয়া জমা হয়েছে। ফলে, বিশ্বব্যাপী ৯টি মিশনে (যেমন: কঙ্গো, সাউথ সুডান, লেবানন) প্রায় ১৩,০০০ থেকে ১৪,০০০ সৈন্য ও পুলিশ কর্মী, সাথে বেসামরিক কর্মী ও সরঞ্জাম প্রত্যাহার করা হবে।
এটি মোট শান্তিরক্ষা বাহিনীর ২৫% কমানোর সমতুল্য। একজন জাতিসংঘের কর্মকর্তা বলেছেন, “এই কাটতরি শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে।”
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী দেশ (৫,২৩০ কর্মী মোতায়েন), এবং এই মিশন থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স (আয়) আসে। এই প্রত্যাহার অর্থনৈতিকভাবে ধাক্কা দেবে, কারণ এটি পুলিশ কর্মীদের কর্মসংস্থান ও পরিবারের জীবিকা প্রভাবিত করবে। কূটনৈতিকভাবে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজে প্রভাব পড়তে পারে, যদিও এটি একটি বৈশ্বিক সংকটের অংশ। বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, “জাতিসংঘের নির্দেশ অনুসরণ করে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
জাতিসংঘের এই পদক্ষেপ শান্তিরক্ষা মিশনের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ সরকার এখন অন্যান্য মিশনে ফোকাস করতে পারে, কিন্তু অর্থায়ন সংকট না মিটলে আরও কাটতরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সমাপ্তি: এই প্রত্যাহার শুধু একটি মিশনের শেষ নয়, বৈশ্বিক শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য জাতিসংঘের অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুসরণ করুন।