রাশিয়ার রণক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশি যুবকের ভয়াবহ স্বীকারোক্তি
- “রাশিয়ার রণক্ষেত্রে বাংলাদেশের ছেলেটি এখন ভয়ের প্রতীক — ‘গতকাল আমি মারা যেতাম’“।
- নেটওয়ার্ক জ্যামারই বাঁচিয়েছে জীবন! সোহেল নীরবের ভিডিও কাঁপাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া।
- “যুদ্ধ নয়, বাঁচতে চাই — ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সোহেল সরদার নীরবের আর্তনাদ।
টুইট প্রতিবেদক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া বাংলাদেশি যুবক সোহেল সরদার নীরবের ভিডিওগুলো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসিন্দা এই তরুণটি কাজের প্রলোভনে রাশিয়ায় গিয়ে জোরপূর্বক রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। রণক্ষেত্র থেকে বাংলায় শেয়ার করা তার ভিডিওগুলোতে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মৃত্যুর আশঙ্কা ফুটে উঠেছে।
একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, “গতকাল আমি মারা যেতাম ড্রোনের মাধ্যমে। ঠিক মাথার উপর দিয়েই আসছিল।” এই ক্লিপগুলো RTV নিউজের মতো চ্যানেলেও প্রচারিত হচ্ছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
সোহেলের ফেসবুক প্রোফাইলে (shohel.sorder.nirob.2024) নিয়মিত আপলোড হয় যুদ্ধভূমির ফুটেজ। সর্বশেষ একটি ভিডিওতে, যা ১৫ অক্টোবরের কাছাকাছি শেয়ার হয়েছে, তিনি রাশিয়ান ক্যামোফ্লেজ পোশাকে খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখান। পটভূমিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহন, অবিস্ফোরিত মাইন এবং বিস্ফোরণের ধোঁয়া—এসব দৃশ্য যেন যুদ্ধের নিত্যদিনের ছবি।
ক্লিপটিতে সোহেলের কণ্ঠে অস্থিরতা: “এটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে আমি গতকাল মারা যেতাম। ড্রোনের মাধ্যমে। আমাদের মাথার ওপর দিয়ে সোজা এসে। যখন খুশি হব, তখন বোমা ফেলব। ভাগ্যিস আমাদের এখানে একটা নেটওয়ার্ক জ্যামিং মেশিন আছে, যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জ্যাম করে। ওটাই আমাদের বাঁচিয়েছে।” এই ভিডিওটি X-এ (পূর্বের টুইটার) শেয়ার হয়ে “প্রো-রাশিয়ান প্রচার” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যদিও সোহেলের কথায় ব্যক্তিগত ভয় স্পষ্ট।
আরও একটি ভাইরাল ক্লিপে, যা ফেসবুকে ৯.৭ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে, সোহেল একটি বিশাল ইউক্রেনীয় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ তুলে ধরেন। “শত্রু পক্ষের বিশাল বড় ড্রোন রাশিয়ান প্রযুক্তির মাধ্যমে আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলেছে। এটা দেখুন, কত বড়! এতে বোমা লোড করে আমাদের ওপর ফেলার জন্য এসেছিল। আমরা জিতছি, কিন্তু ঝুঁকি তো আছেই।” এখানে গর্ব মিশ্রিত ভয় প্রকাশ করা হয়েছে, যা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর প্রচারের সাথে মিলে যায়।
তবে X-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, সোহেলের এসব ভিডিওতে ফ্রন্টলাইনের লোকেশন প্রকাশ হচ্ছে, যা রাশিয়ানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “Shohel Sorder Nirob видимо тронулся, ведёт себя не подобающе, Тела украинцев снимает и выставляет, ну и местность заодно।” এটি ১৩ অক্টোবরের একটি পোস্ট।
সোহেলের আরেকটি আবেগপূর্ণ ভিডিওতে, যা ৩.৭ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে, তিনি যুদ্ধের পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় কথা বলেন: “যুদ্ধ শেষ করে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটা ভিডিও করলাম আপনাদের জন্য। এখানে প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই। কিন্তু আমরা টিকে আছি। বাংলাদেশের ভাই-বোনেরা, দোয়া করুন।” এই ক্লিপে ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহন এবং গুলির চিহ্নযুক্ত দেয়াল দেখা যায়, যা তার মানসিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
সোহেলের মতো শুধু তিনি নন—কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় নেওয়া অনেক বাংলাদেশিকে জোর করে সেনাবাহিনীতে পাঠানো হচ্ছে। DW-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার একটি এজেন্সি কমপক্ষে সাতজন বাংলাদেশিকে প্রতারিত করে রাশিয়ান সেনায় পাঠিয়েছে।
এছাড়া, চট্টগ্রামের অমিত বরুয়া, সাভারের আশিকুর রহমান এবং চাঁদপুরের নাসির আহমেদের মতো অনেকে ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের রিপোর্ট অনুসারে, পরিবারগুলো তাদের ছেলেদের উদ্ধারের জন্য ছটফট করছেন। সাম্প্রতিকতম একটি ঘটনায়, একজন সাবেক সেনা কর্মী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, যার শেষ কথা ছিল: “যদি আমার ফোন অফ হয়, ধরে নাও আমি আর নেই।”
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে, গত এক বছরে প্রায় ১০০০ বিদেশি রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, যাদের বড় অংশ দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাসের উচিত এই যুবকদের উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া।
সোহেলের ভিডিওগুলো শুধু ভাইরাল নয়, এগুলো যুদ্ধের করুণ বাস্তবতা এবং প্রতারণার ফাঁদের প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশের যুবকরা যেন আর এই দুঃস্বপ্নে না পড়েন, সেজন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।