ভারত-মঙ্গোলিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত

  • আধ্যাত্মিক বন্ধন উদযাপনে ভারত-মঙ্গোলিয়া সম্পর্কের ৭০ বছর।
  • নয়াদিল্লিতে মোদি–উখনা বৈঠকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার।

বিশ্ব ডেস্ক: ভারত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের আধ্যাত্মিক ও কৌশলগত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (১৪ অ‌ক্টোবর) নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি খুরেলসুখ উখনার মধ্যে বৈঠকে দুই দেশের সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই বৈঠকটি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়, যা ১৯৫৫ সালে শুরু হয়েছিল। উভয় নেতা প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন।

বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন,

“মঙ্গোলিয়া শুধু আমাদের কৌশলগত অংশীদার নয়, বরং আধ্যাত্মিক বন্ধু। আমরা একসঙ্গে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করছি।”

ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সম্পর্ক মূলত বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক বন্ধনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দুই দেশকে ‘আধ্যাত্মিক প্রতিবেশী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৫ সালে মোদির মঙ্গোলিয়া সফরের পর এই সম্পর্ক নতুন গতি পায়। তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে ভারতের সহায়তায় বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও রাষ্ট্রপতি উখনার সঙ্গে বৈঠক করে এই সম্পর্কের “পরবর্তী দশকের রোডম্যাপ” তুলে ধরেন।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা:
দুই দেশ যৌথ সামরিক মহড়া, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে একমত হয়। ভারতের দৃষ্টিতে মঙ্গোলিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ:
বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খনিজ, শক্তি ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

উন্নয়ন সহযোগিতা:
ভারতের “লাইন অফ ক্রেডিট” এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় মঙ্গোলিয়ায় নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। ‘অটল বিহারী বাজপেয়ী আইটি সেন্টার’-এর সাফল্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক:
বৌদ্ধধর্মের আদর্শে দুই দেশের ঐক্যকে আরও মজবুত করতে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও ধর্মীয় পর্যটনের সুযোগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। যোগ ও আয়ুর্বেদ প্রচারে ভারত সহায়তা দেবে।

চুক্তি ও ঘোষণাপত্র

বৈঠকের শেষে উভয় দেশ সংস্কৃতি, শক্তি ও খনিজ খাতে একাধিক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করে।
এছাড়া ৭০ বছরের বন্ধুত্ব উদযাপনে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, যা দুই নেতা যৌথভাবে উন্মোচন করেন।

সবশেষে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র’ প্রকাশিত হয়—যা আগামী দশকের জন্য ভারত-মঙ্গোলিয়া সহযোগিতার পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ নির্ধারণ করে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মঙ্গোলিয়ার “থার্ড নেইবার” নীতি (রাশিয়া ও চীনের বাইরে কৌশলগত ভারসাম্য) ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। দুই দেশ ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রযুক্তি এবং শিক্ষা খাতে যৌথ উদ্যোগ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

SCO ও BRICS ফোরামে সহযোগিতা বৃদ্ধিও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রাষ্ট্রপতি উখনার বৈঠক ভারত-মঙ্গোলিয়া সম্পর্কের ৭০ বছরের যাত্রায় নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও কৌশলগত সহযোগিতার এই সমন্বয় দুই দেশের জনগণের জন্য উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।