আফ্রিকার তরুণদের জাগরণ: জেন-জি এখন পরিবর্তনের প্রতীক।

মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট পলায়ন: জেন-জি বিক্ষোভে সরকারের পতনের আভাস।

বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দিয়ে সরকারের ভিত্তি কাঁপাল এলিট সেনা ইউনিট।

বিশ্ব ডেস্ক: আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ত্যাগ করেছেন। ফরাসি সামরিক বিমানে করে তিনি রোববার রাতে রাজধানী অ্যান্টানানারিভো থেকে ফ্রান্সে পালিয়ে যান বলে সোমবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।

বিক্ষোভের কারণ

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া পানি ও বিদ্যুৎ সংকটবিরোধী আন্দোলন দ্রুত সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও মৌলিক সেবার সংকট নিয়ে বৃহৎ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল তরুণ জেনারেশন-জি (Gen-Z) প্রজন্ম, যাদের গড় বয়স ২০ বছরের নিচে।

শনিবার (১১ অক্টোবর) একটি এলিট সেনা ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এতে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে, এবং পরদিনই তিনি গোপনে ফরাসি বাহিনীর সহযোগিতায় দেশ ত্যাগ করেন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত দুই সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া

রাজোয়েলিনা সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিরোধী নেতা সিতেনি রান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে নিশ্চিত হয়েছি—তিনি দেশ ছেড়েছেন।”

ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, রাজোয়েলিনার পলায়ন ছিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে গোপন সমঝোতার অংশ, এবং বর্তমানে তিনি প্যারিসের এক “নিরাপদ স্থানে” অবস্থান করছেন।

মাদাগাস্কারের সংকট ও বাস্তবতা

দারিদ্র্য: ৩ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৭৫% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।

অর্থনীতি: দেশটি ভ্যানিলা, নিকেল, কোবাল্ট, বস্ত্র ও চিংড়ি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

রাজনৈতিক প্রভাব: ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশ হিসেবে দেশটির রাজনীতিতে এখনো ফরাসি প্রভাব স্পষ্ট।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ শ্রীলংঙ্কা, বাংলা‌দেশ, নেপাল, কেনিয়া ও মরক্কোতে জেন-জি তরুণদের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

তরুণ প্রজন্মের দাবি—স্বচ্ছ প্রশাসন, কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা ও জীবনযাত্রার উন্নয়ন।

সেনাবাহিনীর একাংশ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তবে প্রশাসনিক অচলাবস্থা অব্যাহত।

জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এই ঘটনাকে মাদাগাস্কারের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। তরুণদের নেতৃত্বে এই “জেন-জি বিপ্লব” আফ্রিকার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।