সীমান্তে আরাকান আর্মির ফাঁদে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী

সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণ: বিজিবি সদস্য গুরুতর আহত, সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনাভ
বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম রেজু আমতলী এলাকায় স্থলমাইন বিস্ফোরণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর ডান পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ধারণা করা হচ্ছে, এই মাইনটি মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) পুঁতে রেখেছিল।
রোববার সকাল প্রায় ১১টার দিকে বিজিবির একটি টহল দল সীমান্তে নিয়মিত পাহারায় ছিল। হঠাৎ প্রবল বিস্ফোরণে মাটির নিচে পোঁতা মাইনটি ফেটে যায়। বিস্ফোরণের শকওয়েভে টহলদলের নায়েক মোহাম্মদ আকতার হোসেন (৩৪) গুরুতর আহত হন। তাঁর ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, বাম পায়েও বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর বিজিবি সদস্যরা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন, তবে তাঁর প্রাণহানি আশঙ্কা নেই।
বিস্ফোরণের স্থান
ঘটনাস্থল বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু আমতলী সীমান্ত এলাকা।
এটি ৪০ ও ৪১ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি, সীমান্ত সড়কের পাশে প্রায় ৫০০ গজ ভেতরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থিত। সেখানে একটি নতুন প্রস্তাবিত বিজিবি বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) স্থাপনের কাজ চলছিল। বিস্ফোরণের পরে আরও একটি মাইন, তিনটি হ্যান্ড গ্রেনেড ও একটি মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়, যা মিয়ানমারের আরাকান আর্মির তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজিবি কক্সবাজার রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার পর সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং বিশেষ মাইন ডিটেকশন টিম পাঠানো হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসরুরুল হক বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সীমান্তে এখন অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
আহত নায়েক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, বয়স আনুমানিক ৩৪ বছর, তিনি ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে রেজু আমতলী ফাঁড়িতে (বিওপি) কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ডান পা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই।
পূর্বের ঘটনা
রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় মাইন বিস্তারের ঝুঁকি বেড়েছে।
২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এই সীমান্তে ১৬ জনেরও বেশি মানুষ মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
তবে এই প্রথম কোনো বিজিবি সদস্য সরাসরি মাইন বিস্ফোরণে পা হারালেন, যা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
সরকারের উদ্যোগ ও সতর্কতা
বিজিবি এখন সীমান্তে নতুন মাইন স্ক্যানিং প্রটোকল চালু করতে যাচ্ছে। সীমান্তের দুর্গম এলাকাগুলোতে মাইন নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সংঘাত বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় “পরোক্ষ হুমকি” তৈরি করছে, যা মোকাবিলায় কূটনৈতিক উদ্যোগও জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা আতঙ্কিত। তাঁরা বলছেন, “বনের ভেতর দিয়ে যাতায়াত এখন খুব বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে মিয়ানমারের ভেতর থেকে গুলির শব্দও শোনা যায়।”
এই বিস্ফোরণ ঘটনাটি শুধু সীমান্তের নিরাপত্তা নয়, বরং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়ার আরেকটি সতর্কবার্তা।






