সেনাপ্রধানের নির্দেশে ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: আইসিটির মামলায় নতুন মোড়

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নজরে বাংলাদেশ; অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন মোড়।
টুইট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মামলায় অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে হেফাজতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন কর্মকর্তা বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকলেও একজন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মদ, পলাতক রয়েছেন।
এই পদক্ষেপ ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আইসিটির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধানের প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী নিজস্ব হেফাজতে নিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র আন্দোলনের সময় এই কর্মকর্তারা জোরপূর্বক গুম, হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আইসিটির সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রতিবাদের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মেজর জেনারেল কবির আহম্মদের পলাতক থাকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যিনি আন্দোলন দমনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাঁর খোঁজ চলছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে তদন্ত করা হবে। এছাড়া, আরও ১০ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সত্ত্বেও বিদেশে পালিয়ে গেছে, যার মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর এবং মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদও রয়েছেন।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কালো অধ্যায়—যেখানে সরকারি বাহিনীর গুলিতে শতাধিক ছাত্র ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে সেনাবাহিনীর সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে বিচার ব্যবস্থায় সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ তদন্তও চালাচ্ছে। আগস্ট মাসে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে চলা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের অবশিষ্টাংশ ধরার প্রচেষ্টা চলছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
ঘটনাটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং সেনাপ্রধানের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এটি ১৯৭৭ সালের ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
প্রতিবাদকারী ছাত্র সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু পলাতক কর্মকর্তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারির দাবি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মানবাধিকার তদন্তকে ত্বরান্বিত করেছে। আইসিটির পরবর্তী শুনানিতে এই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।






