ভারতীয় কোম্পানি-নাগরিকদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ইরানের এনার্জি বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় কোম্পানি ও নাগরিকদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের তেল ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নতুন অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদেশি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ অফিস (OFAC) ভারতীয় একাধিক কোম্পানি ও নাগরিকের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

অভিযোগ করা হয়েছে, তারা ইরানের “শ্যাডো ফ্লিট” বা ছায়াময় জাহাজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্যে সহযোগিতা করেছে।

অভিযানে ভারতীয় সংস্থাগুলোও লক্ষ্যবস্তু

মার্কিন ট্রেজারির অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতীয় সত্ত্বগুলো ইরানের পেট্রোলিয়াম সেক্টরে সক্রিয়ভাবে জড়িত, যা Executive Order 13902 অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এর ফলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ ফ্রিজ হয়ে যাবে এবং মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারবে না।

নিষিদ্ধ ভারতীয় কোম্পানি

ভেগা স্টার শিপ ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, মুম্বাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান কোমোরোস-ফ্ল্যাগড জাহাজ NEPTA (IMO 9013701)-এর মালিক ও অপারেটর। অভিযোগ অনুযায়ী, এই জাহাজ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে ইরানি LPG পরিবহন করেছে।

নিষিদ্ধ ভারতীয় নাগরিক

সোনিয়া শ্রেষ্ঠা, ভেগা স্টার শিপ ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড-এর মালিক, যিনি ইরানি পণ্য পরিবহনে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন।

বরুণ পুলা, মার্শাল আইল্যান্ডস-ভিত্তিক বার্থা শিপিং ইনক.-এর মালিক; যার পরিচালিত PAMIR (IMO 9208239) জাহাজ ২০২৪ সালে চীনে লক্ষাধিক ব্যারেল ইরানি LPG পরিবহন করেছে।

ইয়াপ্পান রাজা, ইভি লাইন্স ইনক.-এর মালিক; যার SAPPHIRE GAS (IMO 9320738) জাহাজ ২০২৫ সালে চীনে বিপুল পরিমাণ ইরানি LPG সরবরাহ করেছে।

নিষেধাজ্ঞার কারণ ও প্রভাব

ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্ক জাহাজ-থেকে-জাহাজে স্থানান্তর ও ভুয়া ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে ইরানি জ্বালানির উৎস লুকিয়ে রাখে। এই অর্থ ইরানের রাষ্ট্রীয় তহবিল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়নে ব্যবহৃত হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি।

এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের “ম্যাক্সিমাম ইকোনমিক প্রেশার” নীতির অংশ, যার লক্ষ্য ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যে নামানো। এই উদ্যোগে ইরানের তেল রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭৩ ডলারের ওপরে উঠেছে।

ভারতের জন্য নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এই নিষেধাজ্ঞা ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর প্রভাবে ভারত-ইরান বাণিজ্য এবং চাবাহার বন্দর প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যেহেতু মার্কিন ওয়েভার ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অতীতে অনুরূপ পরিস্থিতিতে দিল্লি সাধারণত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে।

মার্কিন এই পদক্ষেপ ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ালেও, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতকে এখন নিষিদ্ধ সত্ত্বগুলো থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে এবং ইরান-সম্পৃক্ত এনার্জি বাণিজ্যে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।

সূত্র: মার্কিন ট্রেজারি প্রেস রিলিজ, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনসমূহ।