বারনই নদ দূষণে বিপর্যয়: তিন লাখ মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত, হুমকিতে মাছ ও জীববৈচিত্র্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর প্রাণ-বারনই নদ এখন পরিণত হয়েছে দূষণের মৃত্যুপুরীতে। শহরের হাসপাতাল, শিল্প এলাকা ও কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য প্রতিদিন সরাসরি গিয়ে পড়ছে এই নদে। ফল-নদীর পানি হয়ে উঠেছে বিষাক্ত, আর সেই পানিতে ভুগছে রাজশাহী ও নাটোর জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
‘বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, শিশু-বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ দাদ, ফাঙ্গাস, স্ক্যাবিস, খোসপাঁচড়া ও জকইচে আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হচ্ছেন না।
পবা উপজেলার নওহাটার ভ্যানচালক শাহীন আলমের ভাষায়, আমাদের মহল্লায় অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত। এক বছর ধরে আমি, স্ত্রী ও সন্তানরা চর্মরোগে ভুগছি- চিকিৎসাতেও কাজ হচ্ছে না।
একই চিত্র নাটোরের নলডাঙ্গাতেও। স্থানীয় বাসিন্দা রুবিনা বেগম জানান, তাঁর পরিবারের ছয়জন দেড় বছর ধরে ভুগছেন একই রোগে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, বারনই নদে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার বর্জ্য সরাসরি পড়ে। ওই পানি ব্যবহার ও মাছ খাওয়ার মাধ্যমেই রোগ ছড়াচ্ছে। জনগণকে এখনই এই পানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এদিকে নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী সতর্ক করে বলেন, বর্জ্য শোধনাগার ছাড়া রাজশাহীকে বাঁচানো যাবে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে।
অন্যদিকে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাসুদ জানিয়েছেন, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন জানান, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন চলছে।
এদিকে, শুধু মানুষ নয়- দূষণের বিষে মারা যাচ্ছে নদীর মাছ, ধ্বংস হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ফলে হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা।






