ফ্রিডম ফ্লটিলা কনভয়ে ইসরায়েলি হামলা: ৯ জাহাজ দখল

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলা ফ্রিডম ফ্লটিলা কোয়ালিশনের জাহাজে: মানবিক মিশনে নতুন উত্তেজনা।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্রিডম ফ্লটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) পরিচালিত মানবিক সাহায্যবাহী কনভয়কে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আক্রমণ করে। গাজা থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে সংঘটিত এ আক্রমণে নয়টি জাহাজের মধ্যে আটটি ইসরায়েল দখলে নেয়।
আক্রমণের সময়রেখা
ভোর ৪:৩৪ মিনিটে ইসরায়েলি নৌবাহিনী প্রথমে তিনটি জাহাজ—গাজা সানবার্ডস, আলা আল-নাজ্জার এবং আনাস আল-শরিফ—বোর্ড করে।
এরপর সকাল ৫:৩৫ মিনিটে আরও আটটি জাহাজ আটক করা হয়: আব্দ এলকারিম ইদ, আলা আল-নাজার, আনাস আল-শরিফ, গাজা সানবার্ড, লেইলা খালেদ, মিলাদ, সোল অফ মাই সোল ও উম সাদ।
শুধু ‘কনসায়েন্স’ জাহাজটি তখনও চলছিল, যা পরবর্তীতে হেলিকপ্টার হামলার মুখে পড়ে।
কনভয়টি ক্রিট দ্বীপ থেকে গাজার দিকে যাচ্ছিল, যাতে প্রায় ৯৩ জন যাত্রী ছিলেন—ডাক্তার, সাংবাদিক ও নির্বাচিত কর্মকর্তা। লাইভস্ট্রিম বন্ধ হয়ে যায় এবং জিপিএস সিগন্যাল জ্যাম করা হয়।
মালয়েশিয়ান নাগরিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নয়জন মালয়েশিয়ান নাগরিক এই কনভয়ে ছিলেন, যার মধ্যে আটজন কনসায়েন্স জাহাজে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “মানবিক সহায়তা ঠেকানো অগ্রহণযোগ্য।”
ইসরায়েলের ব্যাখ্যা
ইসরায়েল দাবি করেছে, এটি গাজার আইনি নৌ-অবরোধ কার্যকর করার অংশ এবং যাত্রীদের নিরাপদে বন্দরে নেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে।
এফএফসি’র অভিযোগ
এফএফসি ও টিএমটিজি একে “অবৈধ সামরিক আক্রমণ” বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনের সদস্য ডেভিড হিপ বলেন,
“ইসরায়েলের এই জব্দ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমাদের যাত্রীরা কোনো অপরাধ করেননি; তাদের আটক অবৈধ।”
তাদের দাবিগুলো—গাজার নৌ অবরোধের অবসান, মানবিক সাহায্য সরাসরি গাজায় পৌঁছানোর নিশ্চয়তা, সকল আটক যাত্রীর অবিলম্বে মুক্তি, আক্রমণের পূর্ণ আন্তর্জাতিক তদন্ত।
২০০৭ সাল থেকে গাজা ইসরায়েলের নৌ-অবরোধের আওতায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধে ৪২,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০১০ সালের মাভি মারমারা হামলার মতোই এটি আরেকটি বিতর্কিত অভিযান।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
আল জাজিরা, রয়টার্স ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে “আগ্রাসী আক্রমণ” বলে নিন্দা করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC)-এর তদন্ত দাবি করেছে। এক্স-এ (#FreedomFlotilla, #GazaGenocide) হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে।
এই হামলা গাজার মানবিক সংকটকে আরও প্রকট করেছে এবং আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এমন আক্রমণ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এফএফসি জানিয়েছে,
“এটি আমাদের শেষ মিশন নয়; আমরা আরও ফ্লটিলা পাঠাব।”







