পাহাড়ি শিশুরা পাচ্ছে প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা

জেলায় ৩৮৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাহাড়ি শিশুরা নিরাপদে টিকা পাবে।
বান্দরবানে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন।

বান্দরবান প্রতি‌নি‌ধি: বান্দরবানে প্রথমবারের মতো শিশু ও কিশোরদের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে বিনামূল্যে টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা তথ্য অফিস এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় এই ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে।

এটি সরকারের প্রসারিত টহরকারি প্রতিরোধ ইমিউনাইজেশন (ইপিআই) কর্মসূচির অংশ, যা দেশের পাঁচ কোটি শিশুকে লক্ষ্য করে। বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের টাইফয়েডের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করাই এ কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য।

এই টিকাদান ক্যাম্পেইন ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রথম পর্বে (১২ থেকে ৩০ অক্টোবর) স্কুল, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্থায়ী টিকা কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হবে। দ্বিতীয় পর্বে (১ থেকে ১৩ নভেম্বর) গ্রামীণ এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং পাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হবে। ক্যাম্পেইনের সময় শুধুমাত্র এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া হবে, যা ৫-৭ বছরের জন্য সুরক্ষা প্রদান করবে।

বান্দরবানে মোট ১ লাখ ২১ হাজার শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বয়সসীমা ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম। বিশেষভাবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই টিকাদানে উপযুক্ত। জেলায় মোট ৩৮৪টি টিকাদান কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে কোনো শিশু বাদ না পড়ে।

অভিভাবকরা অনলাইনে (যেমন ইপিআই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট) শিশুর নাম, বয়স ও ঠিকানা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। বর্তমানে প্রায় ৬৫% শিশুর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। অফলাইন বিকল্পও রাখা হয়েছে; নিবন্ধন না করলেও নিকটস্থ টিকা কেন্দ্রে শিশুর জন্ম সনদ বা স্কুল আইডি দেখিয়ে টিকা নেওয়া সম্ভব। নিবন্ধন প্রক্রিয়া তিন ধাপে সম্পন্ন হয়: প্রথমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন, এরপর টিকাদানের তারিখে কার্ড ডাউনলোড এবং শেষে কেন্দ্রে কার্ড দেখিয়ে টিকা গ্রহণ। কিছু এলাকায় প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই অভিভাবকরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ক্যাম্পেইন আয়োজক জেলা স্বাস্থ্য অফিস, জেলা তথ্য অফিস, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং স্থানীয় সরকার। সম্প্রতি, ৭ অক্টোবর সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের জন্য এক দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেছেন জেলা তথ্য অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক এন.এ. জাকির এবং অনলাইনে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় মাহমুদ চয়ন। ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

টাইফয়েডের মতো সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে এই ক্যাম্পেইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বিশেষত পাহাড়ি এলাকায় যেখানে পানীয় জলের সমস্যা বেশি। দেশব্যাপী এটি প্রথমবারের মতো এত বড় স্কেলে টাইফয়েড টিকা প্রদান। ৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধন চলমান এবং কোনো বড় বাধা নেই। অভিভাবকরা আরও তথ্য বা সহায়তার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হেল্পলাইন (১৬২৬৩) এ যোগাযোগ করতে পারেন।

শিশু স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে বান্দরবানের শিশুরা টাইফয়েড থেকে নিরাপদ থাকে।