রাজশাহীতে বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপন

রাজশাহীতে বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপন: নগরীকে আরও সুন্দর করার প্রত্যয়।

মুরাদুল ইসলাম স‌নেট: দেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং বাসযোগ্য নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীকে আরও উন্নত ও সুন্দর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বক্তারা। বিশ্ব বসতি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (০৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নগরীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানের উপর জোর দেওয়া হয়।

এই দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আরবান ক্রাইসিস রেসপন্স’ (বাংলায়: ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সারা’) যা নগরকেন্দ্রিক সংকট মোকাবিলায় পরিকল্পিত উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) যৌথভাবে আয়োজিত এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে, সকাল সাড়ে দশটায়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আরইটি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আরডিএ চেয়ারম্যান এস. এম. তুহিনুর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, গণপূর্ত রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী এবং জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভার আগে সকাল দশটায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় প্রশাসন, আরডিএ, পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। এই র‌্যালির মাধ্যমে নগর পরিকল্পনা, পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের সচেতনতা ছড়ানো হয়। জাতীয় পর্যায়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও এই দিনে চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত র‌্যালি ও সেমিনার আয়োজন করেছে, যেখানে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান অতিথি ছিলেন।

বক্তাগণ বলেন, দেশের সকল স্তরের মানুষ রাজশাহীকে সবচেয়ে সুন্দর শহর বলে স্বীকার করেন। এমনকি শিশুরাও এই কথা বলে। কিন্তু নগরপরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। নগরীর সমস্যা চিহ্নিত করতে হলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, নগরবাসীদের অংশগ্রহণও জরুরি।

আলোচনায় নগরীর বর্তমান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
যানজট ও পার্কিং: সাহেব বাজার, লক্ষীপুর ও ভদ্রা মোড়ে তীব্র যানজট। পার্কিং ব্যবস্থা অপ্রতুল। অটোরিকশার অতিরিক্ত সংখ্যা (প্রয়োজনের চেয়ে বেশি) রাস্তার তিন-চার লেন দখল করছে।

পানি নিষ্কাশন: ড্রেনেজ সিস্টেমের ঘাটতির কারণে অনেক রাস্তায় পানি জমে যায়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অপরিকল্পিত নির্মাণ: কিছু ভবন অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হচ্ছে। এসব ভবনে উঠতে ফুটপাত ব্যবহার হচ্ছে, যা পথচারীদের অসুবিধায় ফেলছে।

অন্যান্য: ম্যানহোলের ঢাকনা ঘনঘন চুরি হচ্ছে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কারণ শহরের যানবাহন সংখ্যা এখনও তাৎক্ষণিকভাবে এতটা চাপ সৃষ্টি করেনি।

ইজিবাইকের সমস্যা: বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ইজিবাইকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যা যানজট বাড়াচ্ছে। তবে এটি অনেক পরিবারের চালিকাশক্তি, তাই সমাধান কঠিন।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান ও আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান নগর পরিকল্পনায় নিরাপত্তা ভবনের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী গণপূর্ত অবকাঠামোর উন্নয়নে জোর দেন, যখন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার নগরবাসীদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ড. মোস্তাফিজুর রহমানের প্রবন্ধে নগর পরিকল্পনার টেকসই মডেল এবং স্থানীয় সম্পদের ব্যবহারের উপর আলোকপাত করা হয়।

প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, “আমরা নগরের সকল সুবিধা এখনও সবাইকে দিতে পারিনি। কিন্তু রাজশাহীকে আরও ভালো রাখার প্রত্যয় আমাদের সকলের। এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।” তিনি নগর পরিকল্পনায় সকলের অংশগ্রহণ এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

বিশ্ব বসতি দিবস ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার পালিত হয়। এটি জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হয়েছে নগরকেন্দ্রিক সমস্যা (যেমন, টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, পরিবেশ রক্ষা) মোকাবিলায়। বাংলাদেশে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এর নেতৃত্ব দেয়। এবছরের প্রতিপাদ্য নগর সংকটের দ্রুত প্রতিক্রিয়া গ্রহণের উপর জোর দিয়েছে।

রাজশাহীর এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায়ও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।