ডেনমার্কে বারাক এমএক্স চুক্তি: ইউরোপে রাজনৈতিক ঝড়

ডেনমার্কের দিকে ইসরায়েলের বারাক এমএক্স: বাল্টিক হুমকির জবাবে ইউরোপে নতুন প্রতিরক্ষা ভারসাম্য।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডেনমার্কে সাম্প্রতিক ড্রোন হামলার পর ইসরায়েলের উন্নতমানের বারাক এমএক্স (Barak MX) এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তি আলোচনায় এসেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (IAI)-এর এই সিস্টেমটি বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ান হুমকি মোকাবিলায় ডেনমার্ককে শক্তিশালী করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্লোবসসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডেনমার্ক বর্তমানে ফ্রান্সের SAMP/T সিস্টেমের বদলে বারাক এমএক্সকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে, বিশেষত এর উন্নত ড্রোন নিউট্রালাইজেশন ক্ষমতার কারণে।
ড্রোন হামলার পর জরুরি সিদ্ধান্ত
৬ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়, “ইসরায়েল ডেনমার্ককে বারাক এমএক্স বিক্রি করতে যাচ্ছে, যা বাল্টিক অঞ্চলে রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।” ডেনমার্কের বিমানবন্দর ও এনার্জি স্থাপনায় সাম্প্রতিক অজানা ড্রোন হামলার ঘটনাই এই আগ্রহের পেছনের মূল কারণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেনমার্ক ২০৩০ সালের মধ্যে এয়ার ডিফেন্সে ৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ৪-৬টি বারাক এমএক্স ব্যাটারি স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা উপকূলীয় অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষায় ব্যবহৃত হবে। চুক্তির সম্ভাব্য মূল্য কয়েকশো মিলিয়ন ইউরো হতে পারে।
বারাক এমএক্স: ইউরোপের নতুন ভরসা
বারাক এমএক্স একটি মাল্টি-লেয়ার্ড, মডুলার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যা ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল এবং ব্যালিস্টিক প্রজেকটাইল ধ্বংস করতে পারে। এতে তিনটি ইন্টারসেপ্টর রেঞ্জ রয়েছে—শর্ট (৩৫ কিমি), মিডিয়াম (৭০ কিমি) এবং লং (১৫০ কিমি)। সিস্টেমটির বিশেষত্ব হলো এর “সফট কিল” প্রযুক্তি, যা ড্রোনকে সরাসরি ধ্বংস না করে ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস ও মরক্কোর সঙ্গে বারাক এমএক্স বিক্রয় চুক্তি করেছে। স্লোভাকিয়ার সঙ্গে ৫৬০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা রপ্তানি। ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোও এখন এই সিস্টেমের প্রতি আগ্রহী।
রাশিয়ান প্রভাব ও বাল্টিকের দুর্বলতা
বাল্টিক সাগর অঞ্চল বর্তমানে ন্যাটো-রাশিয়া উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ ঘাঁটি ও সাবমেরিন কার্যক্রম ডেনমার্ক, সুইডেন ও বাল্টিক দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি বর্নহোলম দ্বীপের কাছে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজের সিমুলেটেড স্ট্রাইক এবং অজ্ঞাত ড্রোন উড্ডয়নের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ডেনমার্কের সম্ভাব্য এই ক্রয় ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিরক্ষা বলয়কে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ান S-৩০০ ও S-৪০০ সিস্টেম থেকে সরে এসে এখন ইসরায়েলি প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে।”
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচকরা বলছেন, “ডেনমার্ক এখন গাজার হত্যাযজ্ঞ ভুলে ইসরায়েলি অস্ত্র কিনছে।” কেউ কেউ এটিকে “নৈতিক দোটানা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে, সমর্থকরা বলছেন, “বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নীতির চেয়ে বাস্তবতাই বড়।”
যদি চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ডেলিভারি শুরু হতে পারে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ। যদিও কোপেনহেগেন বা তেল আভিভ কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত করেনি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—এটি ইউরোপের এয়ার ডিফেন্স কৌশলে একটি বড় মোড়, যা বাল্টিক সাগর অঞ্চলে নতুন প্রতিরক্ষা ভারসাম্য সৃষ্টি করবে।







