ঢাকায় পাকিস্তানি জেনারেল: প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত

পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিবের ঢাকা সফর: প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন অধ্যায়।

টুইট প্রতি‌বেদক: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জয়েন্ট স্টাফের পরিচালক (ডিজিজেএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিব ৬ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছেছেন চার দিনের এক উচ্চপর্যায়ের সরকারি সফরে। এই সফরটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর উভয় দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সংলাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি)-এর আমন্ত্রণে এই সফর সম্পন্ন হচ্ছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাবিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ৬ অক্টোবর সকালে ঢাকায় অবতরণ করে। গত মাসে এএফডি’র অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং ডিরেক্টরেট থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে এই সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি—যার মধ্যে রয়েছে যৌথ সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ বিনিময় এবং কৌশলগত আলোচনা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সি এম কামরুল হাসানের জানুয়ারি ২০২৫-এর পাকিস্তান সফরের ধারাবাহিকতায় এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এএফডি প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান পুরো সফরের দায়িত্বে রয়েছেন। সফরকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিব বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যার মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সফরে গার্ড অব অনার ও আনুষ্ঠানিক সমারোহের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি বিভাগের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পান এবং চাকলালা, রাওয়ালপিণ্ডিতে অবস্থিত জয়েন্ট স্টাফ হেডকোয়ার্টার্সের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে আর্টিলারি ও ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কমান্ড, একটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের নেতৃত্ব এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অভিজ্ঞ সদস্য এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের স্নাতক। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ জন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে তিনি একজন।

এই সফর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সেনা প্রতিনিধি দলের পাকিস্তান সফর এবং পরবর্তীতে আইএসআই-এর তিন সদস্যের ঢাকায় আগমন ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সূচনা। বিশ্লেষকদের মতে, এসব সফর বাংলাদেশের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে ভারসাম্য আনার প্রচেষ্টার অংশ।

তবে সফরটি ঘিরে কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত এখনও অনেকের মনে জাগ্রত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলে২ছেন, “পাকিস্তানের ছায়া আবার ঢাকায় প্রবেশ করছে কেন?” কেউ কেউ এটিকে আইএসআই প্রভাব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা বলেও মন্তব্য করেছেন। যদিও সরকারি পর্যায়ে সফরটিকে ‘সম্মানজনক কূটনৈতিক সফর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আঞ্চলিকভাবে এই সফর ভারতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতীয় গণমাধ্যমের কিছু বিশ্লেষণ বলছে, এটি ইউনুস সরকারের ‘অ্যান্টি-ইন্ডিয়া’ নীতির অংশ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে।

সফরের শেষ দিনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিবের ফেরার পর এই সংলাপ থেকে কী ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা বেরিয়ে আসে, সেটিই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের গতি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

সূত্র: বিডিমিলিটারি.কম, নর্থইস্ট নিউজ, ইন্ডিয়া.কম, উইকিপিডিয়া ও এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্টসমূহ।