তাকাইচি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ার ইঙ্গিত

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি: বাজারে উচ্ছ্বাস, ইয়েন দুর্বল, বিওজে’র নীতিতে স্থিতাবস্থা—বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও ইতিবাচক।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপানের শাসক লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) শনিবার (৪ অক্টোবর) সানায়ে তাকাইচিকে দলের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে, যা তাকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসে স্থান দিয়েছে। নির্বাচনের পরদিনই সোমবার (৬ অক্টোবর) জাপানের শেয়ারবাজারে রেকর্ড উল্লম্ফন দেখা যায়, অন্যদিকে ইয়েন ডলারের বিপরীতে দুর্বল হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান আবারও ব্যয়নির্ভর অর্থনৈতিক নীতি (Fiscal Dovish Policy) অনুসরণ করতে পারে, যা ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)-এর আসন্ন সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সোমবার টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে নিকেই ২২৫ সূচক ৪.৭ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৪৭,৯৪৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে। প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, কারণ তাকাইচি জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে একটি “কোয়াসি-সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স” গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

অন্যদিকে, ইয়েন ডলারের বিপরীতে প্রায় ১.৫ থেকে ২ শতাংশ দুর্বল হয়ে ১৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে ইয়েনকে আবারও ফান্ডিং কারেন্সি হিসেবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফলে বিওজে’র সুদোন্নয়নের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩০-৩৫ শতাংশে।

জাপানি সরকারি বন্ড মার্কেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—মধ্যমেয়াদি বন্ড কেনা হলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্ড বিক্রি হয়েছে, যা বাজেট ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জ

৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী এবং তাঁর নীতির পুনরুজ্জীবন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি মার্গারেট থ্যাচারের আদর্শে অনুপ্রাণিত বলে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে জাপান আবারও ‘অ্যাবেনমিক্স ২.০’-এর পথে হাঁটবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে, এলডিপি বর্তমানে সংসদে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, ফলে নীতি বাস্তবায়নে তাকাইচিকে বিরোধী দলের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হবে।

সংসদে মধ্য অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক ভোটের মাধ্যমে তাকাইচিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত করা হবে। এর আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা তাঁর জন্য প্রথম কূটনৈতিক পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

রয়টার্স ও ব্লুমবার্গসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র জানিয়েছে, তাকাইচির অর্থনৈতিক নীতি বিনিয়োগ-বান্ধব হলেও ইয়েন দুর্বল হওয়ায় আমদানি খরচ ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি অ্যাবেনমিক্স ২.০—কিন্তু নীতিগত স্পষ্টতা না আসা পর্যন্ত বাজার কিছুটা সতর্ক থাকবে।”

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক

সানায়ে তাকাইচির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এলডিপি দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার অন্যতম বড় সমর্থক। জাপান বর্তমানে মেট্রো রেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, এবং আর্থিক প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী দেশ। তাকাইচি ক্ষমতায় আসায় জাপানের অবকাঠামো বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তাকাইচির নির্বাচনে বাজারে আশাবাদ তৈরি হলেও ইয়েন দুর্বলতা ও বাজেট ঘাটতির ঝুঁকি রয়ে গেছে। তবে তাঁর নেতৃত্বে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।