তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম, চার জেলায় প্লাবন
উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে হাজারো পরিবার পানিবন্দী, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
টুইট প্রতিবেদক: উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তার পানি টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়েছে এবং আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) জানিয়েছে, বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই এবং পানি দ্রুত নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার (6 অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত তিস্তার পানি কাউনিয়া (রংপুর) পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং গাইবান্ধায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু এলাকায় ভারি বর্ষণ হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় অঞ্চলে উজান বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে। প্রধান পয়েন্টগুলোতে: কাউনিয়া (রংপুর) বিপদসীমার ১-২ সেন্টিমিটার ওপরে, দোয়ানী (লালমনিরহাট) বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে, গাইবান্ধা বিপদসীমার ওপরে এবং চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করেছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট, বিদ্যানন্দ ও উলিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ২,০০০ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। স্থানীয়রা চর থেকে শিশু ও গৃহপালিত পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। রংপুর ও নীলফামারীর চরাঞ্চলে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে, যা কৃষকদের বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে। গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাপাউবো জানিয়েছে, আগামী ৩ দিনে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি হ্রাস পাবে, যার ফলে চার জেলায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী দুই দিন বাড়বে, পরে স্থিতিশীল হবে। গঙ্গা ও পদ্মা নদী বাড়লেও বিপদসীমার নিচে থাকবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেছেন, “ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপদসীমার নিচে, তাই বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। পানি দ্রুত নামবে।”
জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করেছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। কৃষি অফিসাররা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বীজ ও সার সরবরাহের পরিকল্পনা করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানীতে আগামী দিনগুলোতে শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। স্থানীয়দের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আরও আপডেটের জন্য বাপাউবো ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।