বান্দরবানে পুলিশের নির্বাচনি দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মশালা

বান্দরবানে নির্বাচনি দায়িত্বে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চতুর্থ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

বান্দরবান থেকে অসীম রায়(অশ্বিনী): আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বান্দরবান জেলায় চতুর্থ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মশালা পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত, যা দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ।

কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন স্তরে এমন প্রশিক্ষণ চালিয়ে আসছে, যার মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন দিনের কর্মশালা (সেপ্টেম্বর ২০২৫) এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। বান্দরবানের এই কর্মশালা পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় চ্যালেঞ্জ যেমন দুর্গমতা এবং জাতিগত বৈচিত্র্য বিবেচনায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে বান্দরবান পুলিশ লাইনের কনফারেন্স হলে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা (চতুর্থ পর্যায়) অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম (বার), পুলিশ সুপার, বান্দরবান জেলা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: আকরাম হোসেন, বিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি (ফিন্যান্স), বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা। অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলার ঊর্ধ্বতন অফিসারগণ, সকল প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় নির্বাচনি নিরাপত্তা, ভোটার সুরক্ষা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের উপর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

প্রধান অতিথি মো: আকরাম হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে পুলিশের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ আরও সুদৃঢ় করা। নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন, যেখানে পুলিশের ভূমিকা নিরপেক্ষতা, শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো ভোটার, প্রার্থী এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা। এজন্য প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে আইন, আচরণবিধি এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, “বান্দরবানের মতো পার্বত্য জেলায় নির্বাচনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সদস্যদের দক্ষ করে তুলছি যাতে নির্বাচন হয় শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ।” তিনি আরও জানান, এই চতুর্থ পর্যায়ের কর্মশালায় ৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছে, যারা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনি ডিউটি পালন করবেন। প্রশিক্ষণে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা, ক্রাউড কন্ট্রোল, সাইবার সিকিউরিটি এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত টপিক অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই কর্মশালা বাংলাদেশ পুলিশের দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ, যা আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ১৫০ জন মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষিত হয়েছেন, যারা স্থানীয় স্তরে এই জ্ঞান প্রচার করছেন। বান্দরবানের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এই প্রশিক্ষণ জাতিগত সংঘর্ষ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষভাবে সহায়ক। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমরা সকলে আশা করি, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনারা মাঠ পর্যায়ে আরও দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। মনে রাখতে হবে আমাদের লক্ষ্য হলো ‘নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য।'”

অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে প্রশিক্ষকদের হাতে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয় এবং গ্রুপ ফটো তোলা হয়। এই কর্মশালা বান্দরবানে নির্বাচনি প্রস্তুতিকে নতুন গতি প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এমন প্রশিক্ষণগুলো পুলিশের পেশাদারিত্বকে শক্তিশালী করবে।