জনগণের আস্থাই মুখ্য: বিএনপির মনোনয়ন নীতি জানালেন তারেক

দুই দশক পর গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার: বিএনপির মনোনয়ন কৌশল তুলে ধরলেন তারেক রহমান।

টুইট প্রতিবেদক: প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

লন্ডন থেকে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনোনয়ন বাছাই কৌশল, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের গুরুত্ব, সম্ভাব্য জোট গঠন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়াসহ দেশের নির্বাচনী রাজনীতির নানা সমসাময়িক বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

এই সাক্ষাৎকারটি বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় দুই পর্বে প্রচারিত হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে জনকেন্দ্রিক করার উপর জোর দিয়ে বলেন, দল কখনো পেশাগত দক্ষতা, অর্থের প্রভাব বা পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না। তিনি বলেন, “আমরা কখনোই পেশিশক্তি, টাকার প্রভাব বা পারিবারিক বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি, ভবিষ্যতেও দেব না।

মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই, সেটি হলো—প্রার্থী যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা সম্পর্কে জানেন, মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা থাকে, এবং ওই এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা রাখেন।”

তারেক রহমান আরও বিস্তারিতভাবে বলেন, “আমরা চাই এমন একজন প্রার্থী, যার সঙ্গে এলাকার তরুণ, নারী, মুরুব্বি, ছাত্রছাত্রী—সব শ্রেণির মানুষের যোগাযোগ আছে। যার প্রতি মানুষের আস্থা ও জনসমর্থন রয়েছে। জনগণের সমর্থন যার সঙ্গে থাকবে, তাকেই আমরা প্রাধান্য দেব।” এই কৌশলের অংশ হিসেবে দল প্রায় ২০০টি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এক মাসের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে (১৫ সেপ্টেম্বর) তারেক রহমান এই ধারণা শেয়ার করেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তৃণমূলের মতামত অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মত থাকা খুবই স্বাভাবিক। কোনো এলাকায় ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি মত দেবে, ১৫ জন আরেকটি মত দেবে—এটাই স্বাভাবিক। আমরা যেখানে মেজরিটির মত পাই, সেটিকেই গুরুত্ব দিই।” তিনি স্পষ্ট করেন, “আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না, বরং এমন একজনকে বেছে নিতে চাইছি, যিনি শুধু দলের নয়, দলমত নির্বিশেষে এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন পান। কারণ নির্বাচনে শুধু দলীয় সমর্থন যথেষ্ট নয়—জনগণের অংশগ্রহণই এখানে মুখ্য।”

সম্ভাব্য জোট গঠনের প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “যে কোনো দল যদি সংবিধান ও আইন মেনে রাজনীতি করে, তাতে উদ্বেগের কিছু দেখি না। নির্বাচন হলে প্রতিযোগিতা থাকবেই, এটিই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।” তিনি দৃঢ়ভাবে যোগ করেন, “বিএনপি অতীতেও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করেছে, এবারও করবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা মানেই উদ্বেগের কারণ নয়।” এর আগে বিএনপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নের সবুজ আলো দিয়েছে, যা জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।

সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়েও তিনি মন্তব্য করেন, যদিও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া, তিনি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিএনপির সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল কবির রিজভি বলেন, “কোনো প্রার্থীকে এখনও সবুজ আলো দেওয়া হয়নি। তারেক রহমান সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনমুখী কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

এই সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। গত বছর আগস্টে হাইকোর্ট তার বক্তব্য প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, যা ২০১৫ সালে আরোপিত হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করেন এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানান।

বিএনপি ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে দলের বিদেশী বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন।

এই সাক্ষাৎকার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপির কৌশলকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।