মহানন্দা নদীর পাড় ধস: বাংলাবান্ধায় ৫০০ পরিবার ঝুঁকিতে

তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীর পাড় ধস: ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ায় জরুরি পরিস্থিতি

টুইট প্রতিবেদন: তেঁতুলিয়া উপজেলা (লালমাটিয়া) বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় মহানন্দা নদীর পাড় ভেঙে পড়েছে। এর মূল কারণ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়া। গত ৩ অক্টোবর থেকে ৯টি স্লুইস গেট খোলা রয়েছে, যা ভারতের উজানে নিম্নচাপজনিত ভারী বৃষ্টির কারণে খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত কোনো নতুন গেট খোলার ঘটনা ঘটেনি।

নদীর স্রোত বৃদ্ধি ও পাড় ধস

ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার ফলে মহানন্দা নদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়েছে। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাশের কয়েকটি গ্রাম—বিশেষ করে বাংলাবান্ধা ও আশেপাশের এলাকায়—নদীর পাড় ভেঙে পড়ছে। প্রায় ৫০০ পরিবারের বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রাস্তা ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এবং দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম (৪৫) বলেন, “আমাদের বাড়ির পিছনে মাত্র ১০ ফুট দূরে নদী। গতরাতে পাড় ভেঙে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। সকালে দেখি, আমাদের রাস্তার অর্ধেকটা পানিতে ডুবে গেছে। এভাবে চললে আমরা কোথায় যাব?”

ফারাক্কা ব্যারেজের ভূমিকা

ফারাক্কা ব্যারেজটি গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত এবং মহানন্দা নদীর মতো সহায় নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে। অতীতে ২০১৯ সালে ১১৯টি স্লুইস গেট খোলার ফলে মহানন্দা ও পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোত তৈরি হয় এবং রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল। ২০২৪ সালের আগস্টেও ১০৯টি গেট খোলা হয়েছিল, যা পশ্চিমাঞ্চলের জন্য বিপদসঙ্কেত ছিল। এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ব্যারেজে নিম্নচাপজনিত ভারী বৃষ্টির কারণে নয়টি গেট খোলা হয়েছে। বাংলাদেশের পানিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পানি ছাড়ার আগে কোনো আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়নি।

আবহাওয়া পরিস্থিতি

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৩ অক্টোবর উত্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ গঠিত হওয়ায় ভারতের উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মহানন্দা নদীর জলস্তর গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ২ মিটারেরও বেশি বেড়েছে। নদীর উপর ভারতের ফুলহারি ব্যারেজও রয়েছে, যা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্থানীয় কৃষি ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল্লাহ জানান, “ঘটনাস্থলে সার্কিট হাউস থেকে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জরুরি সহায়তা হিসেবে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য নদীর পাড় শক্তিশালীকরণ এবং ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।”

স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাসিন্দারা অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ, সতর্কতা ব্যবস্থা এবং ক্ষতিপূরণ দাবিতে জানিয়েছেন।

প্রভাব ও সম্ভাব্য ঝুঁকি

জীবন ও জীবিকার ঝুঁকি: নদীর পাড় ভেঙে ফসল, বসতবাড়ি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত।

কৃষি ও মৎস্য চাষ: প্রধানত কৃষি ও মৎস্যচাষে নির্ভরশীল মানুষদের আয় হ্রাস পাচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি: প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতি আরও বিস্তৃত হতে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।