বাগমারায় এবার ইউপি আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মী পেটালো নৌকার সমর্থকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজন নেতাকর্মীকে পিটিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। এদের মধ্যে তিনজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে শ্রীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের প্রচার চালানোর সময় তাদের উপর হামলা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান ও ইউনিয়ন যুবলীগ সদস্য আলমগীর হোসেনকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে লোহার রডের আঘাতে জিল্লুর ডান পায়ের হাড় ফেটে গেছে। আর বজলুর রহমানের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জিল্লুর রহমান দীর্ঘ সময় ধরে এনা গ্রুপের অধিনে সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মিডিয়া বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জিল্লুর রহমান জানান, শ্রীপুর গ্রামে দুপুর থেকে তারা ১০/১২ জন এমপি এনামুল হকের কাঁচি প্রতীকের প্রচার চালায়। বিকেলে তারা শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে লোকজনের মাঝে কাঁচি প্রতীকের প্রচারপত্র বিলি করছিল। এ সময় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী মোটরসাইকেল যোগে এসে তাদের উপর হামলা করে এবং পিটিয়ে জখম করে। এ সময় তারা তিনটি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। তাদের হাতে লাঠি, লোহার রড ও ধারালো হাসুয়া ছিল।

জিল্লুর রহমান বলেন, হামলার আগে বুঝতে পেরে আমি সাথে সাথে বাগমারা থানার ওসিকে ফোন দিয়েছিলেন। থানা থেকে ঘটনাস্থল তিন মিনিটের পথ। কিন্তু ওখানে কেন গেছি উল্টো প্রশ্ন করে ফোন কেটে দেন ওসি। পুলিশ তাদের কোন সহযোগিতা দেয়নি। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই এবং হামলাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

এলাকাবাসী সূত্র হতে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগমারার জনগনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, মাইক্রোবাস বাহিনীর ভয়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে।

বাগমারায় ইউপি আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মীর উপর হামলাকারিরা।

এদিকে, রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের দেখতে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিনবারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী এনামুল হক। তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।

এনামুল হক বলেন, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হবে। আমি এসব ঘটনার বিচার দাবি করি প্রশাসনের কাছে।

তিনি অভিযোগ করেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ শান্ত বাগমারাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। যখন তখন যত্রতত্র আমার লোকজনকে পেটাচ্ছে। তবে বাগমারাবাসী এসকল নির্যাতনের জবাব দেবে আগামী ৭ জানুয়ারি ব্যালটের মাধ্যমে। আমি শুধু ধৈর্য্য ধরে দেখে যাচ্ছি আর প্রশাসনের কাছে বিচার দিচ্ছি। কিন্তু মানুষের ধৈর্য্যেরও তো লিমিট আছে।

এনামুল হক দাবি করেন, নৌকার সমর্থকরা এ পর্যন্ত কাঁচি প্রতীকের ১৬টি নির্বাচনি ক্যাম্প ২৬ বার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। উপজেলার ৩০টি স্থানে কাঁচির কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৫ জন।

বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেব খান বলেন, খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছে, নৌকার প্রার্থীর লোকজন বেশ কয়েকজনকে মারপিট করে আহত করেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহীর এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন মোট ছয়জন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের এমপি এনামুল হক (কাঁচি), তাহেরপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (নৌকা), উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব (নাঙ্গল), বিএনএমের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম রায়হান, এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুল হোসেন।