মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উপলক্ষে বান্দরবানে হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা

রথযাত্রা, ফানুস ও পিঠা উৎসবে তিনদিনের আয়োজন।
বান্দরবান প্রতিনিধি, অসীম রায় অশ্বিনী: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ (শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা) উপলক্ষে বান্দরবানে শুরু হয়েছে বর্ণাঢ্য উৎসবমালা। উৎসবের অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে বান্দরবান রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
হ্যান্ডবলে জাদিতং দলের জয়
উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হয় জাদিতং হ্যান্ডবল দল ও উজানী পাড়া হ্যান্ডবল দল।
রোমাঞ্চকর খেলায় জাদিতং দল ১৬ পয়েন্টে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। খেলা শেষে বিজয়ী ও রানার্স আপ দলের হাতে নগদ অর্থ ও ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে. এস. মং।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং, সহ-সভাপতি থুই সিং প্রু লুবু, সাধারণ সম্পাদক উ ক্য সিং মার্মা (উহ্লামং), হ্যান্ডবল কমিটির আহ্বায়ক মং সি মং, ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ফুটবলার মাহাফুজুর রশীদ বাচ্চু, এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ক্রীড়াপ্রেমীরা।
প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়েছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর, এবং এতে অংশ নেয় জেলা সদরের ৮টি হ্যান্ডবল দল।
মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎসবের রঙে বান্দরবান
মারমা সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমাকে মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ নামে উদযাপন করে। এই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে চলছে নানা প্রতিযোগিতা, নাটক, পিঠা উৎসব, ফানুস উড়ানো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রাজার মাঠ, রাজবিহার ও পুরাতন রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উজানীপাড়া রাজগুরু মহা বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ড. সুবন্নলাংকারা মহাথেরো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন উৎসবের মূল পর্ব।

তিনদিনব্যাপী উৎসবের কর্মসূচি
৫ অক্টোবর (রবিবার): উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী।
৬ অক্টোবর (সোমবার): পুরাতন রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গল রথযাত্রা, সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়ানো।
৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার): পিঠা উৎসব, দায়ক-দায়িকাদের পূজা, এবং সাঙ্গু নদীতে মঙ্গল রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মার্মা জানান, “প্রবারণা পূর্ণিমা আমাদের ধর্মীয় শুদ্ধতা, ঐক্য ও আনন্দের প্রতীক। এই উৎসব আমাদের সমাজকে একত্রিত করে।”
নিরাপত্তায় কঠোর প্রস্তুতি
বান্দরবান পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন,
“মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎসবকে ঘিরে সাতটি উপজেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পোশাকধারী বাহিনীর পাশাপাশি সদস্যরাও দায়িত্বে থাকবেন।”
শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের আত্মশুদ্ধির উৎসব—অশুভকে বর্জন করে সত্য, সৌন্দর্য ও মৈত্রীর আলোর আহ্বান।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে সংঘের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও আত্মোপলব্ধির সাধনা সম্পন্ন করেন।
বান্দরবানের পাহাড়জুড়ে আজ জ্বলে উঠেছে আলোর প্রদীপ, শান্তি ও ঐক্যের বার্তায় মুখরিত হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা।








