ট্রাম্পের নতুন চাপ: নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্তসাপেক্ষ কমপ্যাক্ট

ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ: নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল শর্তসাপেক্ষ “কমপ্যাক্ট”।
বিশ্ব ডেস্ক: মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন নয়টি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নতুন, বিতর্কিত ১০-দফা “কমপ্যাক্ট” মেমোতে স্বাক্ষর করতে অনুরোধ করেছে। এই মেমোতে স্বাক্ষরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ফেডারেল গ্রান্টস ও অন্যান্য তহবিলে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সুবিধা পাবেন।
তবে শর্ত হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল সংস্কার মেনে চলতে হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
মেমোর মূল উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পাসে রক্ষণশীল মতাদর্শের প্রমোশন এবং প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদ, ডাইভার্সিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রামের ওপর নিয়ন্ত্রণ। ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগ তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই দৃঢ়ভাবে চালু হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৫-এ ট্রাম্প শপথগ্রহণের পরপরই প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু হয়। ২৯ জানুয়ারি তিনি একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যাতে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-সেমিটিজমের ঘটনার ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট করতে বলা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে, হোয়াইট হাউস ঘোষণা করে যে প্রো-জিহাদিস্ট প্রতিবাদে জড়িত অ-নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং হামাস সমর্থক ছাত্রদের ভিসা বাতিল করা হবে।
ফেব্রুয়ারিতে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল ফান্ডিং স্থগিত করা হয়, যেখানে ইহুদি ছাত্রদের ওপর অ্যান্টি-সেমিটিক হয়রানির অভিযোগ ওঠে। মার্চে কলাম্বিয়ার ছাত্র মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করে এবং পরবর্তীতে তাকে আলজেরিয়া বা সিরিয়ায় নির্বাসিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই মাসে কলাম্বিয়াকে ফান্ডিং পুনরুদ্ধারের জন্য শর্তগুলো মেনে নিতে বলা হয়, যা তারা কয়েক দিনের মধ্যে মেনে নেয়। এপ্রিল ২০২৫-এ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেডারেল ফান্ডিংও স্থগিত করা হয়।
জুলাই ৪, ২০২৫-এ “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” পাস হয়, যা এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কর বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসে। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে হার্ভার্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি প্রায় সমাপ্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে হার্ভার্ড ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে এবং নতুন প্রতিবাদ নিয়ম চালু করবে। অক্টোবরের প্রথম দিনগুলোতে হোয়াইট হাউস নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে “কমপ্যাক্ট” মেমো পাঠায়। মেমোটি এডুকেশন সেক্রেটারি লিন্ডা ম্যাকম্যাহনের স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়, যাতে বলা হয়েছে যে স্বাক্ষরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হোয়াইট হাউসের ইভেন্টে আমন্ত্রণ এবং গ্রান্টে অগ্রাধিকার পাবেন।
মেমোতে লক্ষ্যবস্তু নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো: ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, ডার্টমাউথ কলেজ, MIT, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া, USC, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া, এবং ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি। হোয়াইট হাউস এখনও স্পষ্টভাবে বলেনি কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে, তবে তারা সাম্প্রতিক প্রতিবাদ এবং DEI অভিযোগের কারণে নির্বাচিত বলে মনে করা হচ্ছে।
মেমোতে ১০ দফার সংস্কারের মধ্যে মূল বিষয়গুলো হলো: ভর্তি ও নিয়োগে জাতি-লিঙ্গ নিরপেক্ষতা; DEI প্রোগ্রাম পর্যালোচনা বা নিষিদ্ধ; ভর্তি ডেটা প্রকাশ (GPA ও টেস্ট স্কোর অ্যানোনিমাইজড); স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্ট বাধ্যতামূলক; বিদেশী ছাত্রদের সংখ্যা সীমিত (১৫% এর বেশি নয়); ক্যাম্পাসে একপক্ষীয় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ; পাঁচ বছরের জন্য টিউশন ফি ফ্রিজ; হার্ড সায়েন্সে ফ্রি টিউশন; গ্রেড ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণ; ট্রান্সজেন্ডারদের স্পোর্টস, লকাররুম এবং বাথরুমে জন্মগত লিঙ্গের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ; এবং প্রতিবাদে “সভ্যতার শর্ত” মেনে চলা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার মিচ জ্যাক বলেছেন, “আমরা মেমোটি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছি।” ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস বোর্ড চেয়ার কেভিন এলটিফ বলেন, “আমরা নির্বাচিত হয়ে গর্বিত এবং অধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।” অন্যদিকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি DEI কমিটি গঠন করেছে। MIT এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এখনও মন্তব্য করেননি, তবে পর্যালোচনা চলছে।
শিক্ষক ইউনিয়ন ও এক্সপার্টরা এই পদক্ষেপকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্স (AFT) বলেছে, “এটি পক্ষপাত, প্যাট্রোনেজ এবং রাজনৈতিক এজেন্ডার বিনিময়ে ঘুষের গন্ধ নেয়।”
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস (AAUP) প্রেসিডেন্ট টড ওল্ফসন মন্তব্য করেছেন, “এটি ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপের আমন্ত্রণ।” আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন প্রেসিডেন্ট টেড মিচেল বলেন, “ফ্রি স্পিচের জন্য এটি ভয়াবহ পরিণতি।” ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম USC-এর মতো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্টেট ফান্ডিং কাটার হুমকি দিয়েছেন।
এই চুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রি স্পিচ, অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম এবং প্রাইভেসি অধিকারের উপর সরাসরি হুমকি তৈরি করেছে বলে অধিকার সংগঠনগুলোর মত। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি কেবল সিভিল রাইটস আইন মেনে চলার আশ্বাস।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সফল হলে মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্গঠন করা হতে পারে, যেখানে রক্ষণশীল মতাদর্শ প্রমোট হবে এবং DEI প্রোগ্রাম কমে যাবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং রাজ্য-স্তরের বিরোধিতা বাস্তবায়নকে জটিল করবে। এটি ক্যাম্পাসে নতুন প্রতিবাদের সূচনা করতে পারে, বিশেষ করে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ সম্পর্কিত ইস্যুতে।






