ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক হামলা: চারজন নিহত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক হামলা: নার্কো-টেররিস্টদের বিরুদ্ধে চতুর্থ আঘাত, চারজন নিহত।
বিশ্ব ডেস্ক: আজ ভোরে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে মার্কিন সেনাবাহিনী একটি নার্কো-ট্রাফিকিং জাহাজে হামলা চালিয়েছে। হামলায় চারজন নিহত হয়েছে।
এই হামলাকে ট্রাম্প প্রশাসনের নার্কো-টেররিজমের বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযান হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যা মূলত এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ পাউন্ডের জেডিএএম বোমা ব্যবহার করে জাহাজের উপর আঘাত করার দৃশ্য দেখায়। ভিডিওতে দেখা যায়, জাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে দ্রুত ডুবে যাচ্ছে। কোনো মার্কিন সেনা বা সামরিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ভিডিও প্রমাণ হিসেবে শক্তিশালী হলেও, স্বতন্ত্রভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা জরুরি। কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে, ভিডিওটি আংশিকভাবে এআই-জেনারেটেড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হামলায় মার্কিন দক্ষিণ কমান্ড (ইউএসসাউথকম) জড়িত। হেগসেথ জানিয়েছেন, জাহাজটি প্রচুর পরিমাণে কোকেন ও ফেনটানিল বহন করছিল, যা আমেরিকার দিকে যাচ্ছিল। মার্কিন গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন, জাহাজের যাত্রীরা নার্কো-টেররিস্ট এবং তারা ট্রেন ডি আরাগুয়া (টিডিএ) গ্যাং-এর সদস্য। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ টিডিএকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো হামলাকে ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি মিলিশিয়া নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “আমাদের নাগরিক ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। কেউ টিডিএ সদস্য ছিল না, নিহতরা সাধারণ নাগরিক।” উপকূলীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং মাদুরো আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে প্রতিকারের চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
মাদুরোর উপদেষ্টা জানান, তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঘটনাটি তদন্ত করার আহ্বান জানাবেন। রাশিয়া ও চীনের সমর্থনও প্রত্যাশিত, যা মার্কিন পদক্ষেপের আন্তর্জাতিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক বাড়াতে পারে।
মার্কিন কনজারভেটিভ: হামলার সমর্থন জানিয়েছে। সেনেটর বার্নি মোরেনো বলেছেন, “আমেরিকান জীবন বাঁচানো হয়েছে, নার্কো ট্রাফিকাররা একই শাস্তি পাবে।”
মার্কিন লিবারেল/সমালোচক: আইনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেনেটর জ্যাক রিড বলেছেন, “হামলার প্রমাণ নেই, এটি এক্সিকিউটিভ অত্যাচার।” সেনেটর র্যান্ড পলও বলেছেন, সন্দেহভাজনদের বিচার ছাড়া হত্যা করা যায় না।
আন্তর্জাতিক/আইনি বিশেষজ্ঞ: জাতিসংঘের ইউএনক্লোস লঙ্ঘন হতে পারে; বলপ্রয়োগ অ-প্রাণঘাতী হওয়া উচিত যদি না আত্মরক্ষা প্রমাণ থাকে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো জাতিসংঘ-ভিত্তিক তদন্তের দাবি করেছেন।
বিশ্ব মিডিয়া: রয়টার্স ও সিএনএন হামলা নিশ্চিত করেছে, তবে জাহাজের নেশা বা যাত্রীদের পরিচয় স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
হামলাটি ভেনেজুয়েলার সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং মাদুরোর বক্তব্য সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘে সমালোচনা বাড়াতে পারে। মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভিত্তি শক্তিশালী হলেও, ডেমোক্র্যাটরা যুদ্ধ ক্ষমতার উপর অভিযোগ তুলছে। সিভিল লিবার্টি গ্রুপ যেমন এসিএলইউ মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্বল্পমেয়াদে হামলাটি কার্টেলগুলোর উপর ভয় সৃষ্টি করতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন দীর্ঘমেয়াদে তারা সহজেই নতুন ট্রাফিকিং রুট খুঁজে নেবে। এটি ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির স্পষ্ট উদাহরণ, যা নার্কো-টেররিজমের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক পদক্ষেপকে তুলে ধরে, তবে এর ফিরতি প্রভাব, আন্তর্জাতিক আইনি বিতর্ক এবং সংঘাতের ঝুঁকি তীব্র হতে পারে।







