বান্দরবানে দুর্গাপূজার বর্ণিল সমাপ্তি

বান্দরবানে শারদীয় দুর্গাপূজা: ধর্মীয় আচার, সামাজিক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক উৎসবের বর্ণিল সমাপ্তি।

বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলার অন্যতম প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। শুধু ধর্মীয় নয়, পূজার এই আয়োজন সামাজিক সম্প্রীতি, শিল্প, সংস্কৃতি ও পরিবেশ সচেতনতার এক অনন্য মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।

রাজার মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ

বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠে এবারের দুর্গাপূজা ছিল বিশেষভাবে উৎসবমুখর। পূজার প্রতিটি দিন হাজারো ভক্ত, দর্শনার্থী ও সংস্কৃতিপ্রেমীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ স্থান। শাঁখা-সিঁদুরের পসরা, স্থানীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী, ও সামাজিক মিলনমেলায় পূজা প্রাঙ্গণ রূপ নেয় সর্বজনীন উৎসবমুখরতার এক অনন্য পরিসরে।

মহাসপ্তমী থেকে মহানবমী

মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ, দর্পণে দেবী স্নান এবং বিল্বপত্র থেকে দেবীমন্দিরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মহাঅষ্টমী ও মহানবমীতে ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান, কুমারী পূজা এবং হোমযজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা করেন। প্রতিদিন ভক্তরা ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি ও শাঁখধ্বনির মধ্যে দেবীর আরাধনায় মগ্ন থাকেন।

বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে সাংগু নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় এ বছরের দুর্গাপূজা। রঙিন শোভাযাত্রা, ধূপ-মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে ভক্তরা অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানান দেবীকে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবার অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জনের মুহূর্ত পরিণত হয় আবেগঘন এক দৃশ্যে।

নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন উদযাপন

পুরো পূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরকারের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনের বিশেষ তৎপরতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে এবারের পূজা কোনো অঘটন ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।

দেবীর প্রতীকী বার্তা

দেবী দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে অশুভ শক্তির বিনাশ ও ন্যায়ের জয়ের প্রতীক। তাঁর দশভুজা রূপ, সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী ভক্তদের সাহস, শক্তি, ঐশ্বর্য ও জ্ঞানের শিক্ষা দেয়। পূজার আনন্দ শুধু ধর্মীয় নয়, বরং এটি বাঙালির হৃদয়ে শিউলি ফুলের সুবাস, কাশফুলের দোলা, ও ঢাকের তালে সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য প্রকাশ।

পরিবেশবান্ধব প্রতিমা ও সচেতনতা

উল্লেখযোগ্য দিক হলো এবারের পূজায় পরিবেশবান্ধব প্রতিমা ব্যবহার করা হয়েছে এবং মণ্ডপগুলোকে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকমুক্ত। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়েছে, অন্যদিকে পূজা উদযাপনে আধুনিক যুগের দায়িত্বশীল দৃষ্টান্তও স্থাপিত হয়েছে।

বান্দরবানের দুর্গাপূজা শুধু দেবী আরাধনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি হয়ে উঠেছে বাঙালির জীবনাদর্শ, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির এক মহান উৎসব।

ধর্মীয় ভক্তি, সামাজিক সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরিবেশ সচেতনতার সমন্বয়ে এবারের দুর্গাপূজা স্মরণীয় হয়ে থাকবে জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী ও সকল দর্শনার্থীর কাছে।