সরকারি ছুটিতে বান্দরবানে হোটেল-মোটেল-রিসোর্টে বুকিংয়ের ঝড়

বান্দরবান প্রতিনিধি, অসীম রায় (অশ্বিনী): বাংলাদেশের রূপের রানী খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান সবসময়ই প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম পছন্দের ভ্রমণ গন্তব্য। সুউচ্চ পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, সবুজ অরণ্য আর উপজাতীয় সংস্কৃতির মিশেলে গড়ে উঠেছে এখানকার অপরূপ সৌন্দর্য।

সরকারি ছুটি এলেই এই জেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়, আর সেই সাথে জমে ওঠে পর্যটন ব্যবসা।

দুর্গাপূজার ছুটি: পর্যটকদের ভিড়

শারদীয় দুর্গাপূজা ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে শেষ হয়েছে। এরপর ৩-৪ অক্টোবর সরকারি ছুটি এবং শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি মিলে দীর্ঘ অবকাশ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে হাজারো পর্যটক বান্দরবানের পাহাড়, মেঘ আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে আসছেন। স্থানীয় হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বুক হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বহুদিন পর পর্যটক সংখ্যা এতটা বেড়েছে, যা পর্যটন শিল্পকে নতুন প্রাণ দিচ্ছে।

কিয়োকরাডং উন্মুক্ত: বুকিং বাড়ছে

রুমা উপজেলার কিয়োকরাডং পর্যটনকেন্দ্র ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ১ অক্টোবর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। কিয়োকরাডং বাংলাদেশের অন্যতম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ, যা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। কেন্দ্রটি খোলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বুকিংয়ে চাপ বেড়েছে। তবে এখানে ভ্রমণে গাইড নেওয়া এবং চেকপোস্টে তথ্য দেওয়ার নিয়ম মানতে হবে।

হোটেল-রিসোর্টে বুকিংয়ের ঝড়

বান্দরবান সদর, আলিখিল, রুমা, থানচি এলাকায় নতুন নতুন রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে। বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, “এবার পর্যটকদের জন্য সব পর্যটনকেন্দ্র খোলা। পূজার ছুটিতে রুমের ৯০ শতাংশ বুক হয়ে গেছে।”

হিলভিউ হোটেলের ম্যানেজার মো. পারভেজ জানান, “১ থেকে ৪ অক্টোবর আমাদের সব রুম বুকড।” একইভাবে হিলটন রেসিডেন্সির ম্যানেজার মো. আক্কাচ আলী জানান, “সারা বছর ভিড় থাকে, তবে পূজায় ১০০% বুকড।”

জনপ্রিয় হোটেল-রিসোর্টের বুকিং

হোটেল/রিসোর্ট অবস্থান রুম সংখ্যা বুকিং স্থিতি দাম (প্রতি রাত) বিশেষ সুবিধা

হোটেল হিলভিউ বান্দরবান সদর ৫০+ ১০০% বুক ৩,০০০-৫,০০০ টাকা পাহাড় ভিউ, এসি রুম, রেস্তোরাঁ
হোটেল হিলটন।

রেসিডেন্সি বান্দরবান সদর ৪০+ ১০০% বুক ২,৫০০-৪,৫০০ টাকা ফ্যামিলি রুম, জিম, পার্কিং।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট আলিখিল ৩০+ ৯৫% বুক ৪,০০০-৬,০০০ টাকা লেক ভিউ, স্পা, ট্রেকিং গাইড।

সাইরু হিল রিসোর্ট থানচি ২৫+ ৯০% বুক ৩,৫০০-৫,৫০০ টাকা ঝর্ণা কাছে, ক্যাম্পিং, বারবিকিউ।

ফানুশ রিসোর্ট রুমা ২০+ ৮৫% বুক ২,০০০-৪,০০০ টাকা উপজাতীয় থিম, হাইকিং ট্রেল।

হিল প্যালেস রিসোর্ট বান্দরবান সদর ৩৫+ ৯২% বুক ২,৮০০-৪,৮০০ টাকা ইনডোর গেমস, কনফারেন্স হল

(তথ্যসূত্র: হোটেল ম্যানেজার ও অ্যাসোসিয়েশন, ২ অক্টোবর পর্যন্ত)

নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারি

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে। বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওয়সার বলেন, “পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চেকপোস্টে কড়া নজরদারি ও গাইড-ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এবারের পূজা ছুটি পর্যটন খাতকে নতুন গতি দেবে। কিয়োকরাডং, নীলগিরি ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র খোলার ফলে বান্দরবানে পর্যটক আগমন আরও বাড়বে।

স্থানীয় উপজাতীয় সংস্কৃতি, ইকো-ট্যুরিজম এবং অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ এগুলো প্রচারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের সুযোগও তৈরি হয়েছে।