তাসনিম জারাকে ঘিরে সাইবার হয়রানি: নেপথ্যে কারা?

টুইট ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে লক্ষ্য করে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া ছবি, ভিডিও ও ফটোকার্ড ছড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব বলছে, এই প্রচারণার বড় অংশ পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজ থেকে।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬২টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে। দেখা যায়, এসব পোস্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্মিত ভিডিও-অডিও, বিকৃত ছবি এবং মূলধারার গণমাধ্যমের আদলে বানানো বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। বেশির ভাগ কনটেন্ট ছিল আক্রমণাত্মক, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ও অবমাননাকর, যা সরাসরি ফেসবুকের নীতিমালার লঙ্ঘন।

কিছু পোস্টে এমনকি তাসনিম জারার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে যৌনবাহিত রোগের ওষুধের ভুয়া বিজ্ঞাপনে। এই পোস্টগুলো মোট ৭৪ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার বার শেয়ার হয়েছে এবং ৪ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া পেয়েছে-যার অধিকাংশই ছিল অবমাননাকর মন্তব্য।

প্রধান উৎস কারা?

ডিসমিসল্যাব জানায়, সবচেয়ে বেশি বিকৃত ছবি শেয়ার করেছেন মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি নিজেকে ‘জয় বাংলার সৈনিক’ পরিচয়ে উপস্থাপন করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেছেন কভার ফটোতে। মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে তিনি কমপক্ষে ২০টি ছবি শেয়ার করেন, যার মধ্যে ১৮টি বিকৃত।

তাছাড়া “আওয়ামী লীগ ২৩”, “বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ”, “বাংলাদেশ আওয়ামী মুজিবাবাদী লীগ”, “মুজিব সৈনিক”সহ একাধিক ফেসবুক পেজ থেকেও এসব কনটেন্ট ছড়ানো হয়। কিছু পেজ নিজেদের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, কিছু আবার বিজ্ঞাপনী পেজ ছিল।

ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই প্রচারণা চালাতে ৬২টি প্রোফাইল ও পেজের ১৩৩ জন অ্যাডমিন যুক্ত ছিলেন, যাদের মধ্যে ১০২ জন বাংলাদেশে, বাকি সদস্যরা মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পর্তুগালে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে তাসনিম জারা বলেন, “আমাকে কীভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা ডিসমিসল্যাবের রিপোর্টে উঠে এসেছে। কিন্তু এটি শুধু আমার অভিজ্ঞতা নয়-রাজনীতিতে যুক্ত প্রায় সব নারীই এর শিকার হন। এটাই রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার একটি বড় কারণ। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে কারও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বিজ্ঞাপন চালানো প্ল্যাটফর্মটির নীতিমালার বিরোধী হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সরকারের উচিত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা আহ্বান।

নারীর বিরুদ্ধে অনলাইন সহিংসতা বন্ধে দলমত-নির্বিশেষে একটি সাধারণ আচরণবিধি তৈরির পাশাপাশি দ্রুত অপরাধীদের শনাক্তের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন তাসনিম জারা।