কেওক্রাডং ১ অক্টোবর থেকে শর্তসাপেক্ষ উন্মুক্ত

নিষেধাজ্ঞার কারণ: নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং কেএনএফ-এর তৎপরতা

বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং (৩১৭২ ফুট) দীর্ঘ তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার পর শর্তসাপেক্ষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ২৯ সেপ্টেম্বর জারি করা অফিসিয়াল গণবিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ৬টি কঠোর শর্ত মানা বাধ্যতামূলক হবে।

জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানিয়েছেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু সূত্রে স্থগিতের খবরও এসেছে, যা পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

৬ শর্তে কেওক্রাডং ভ্রমণ

১. সীমাবদ্ধ এলাকায় যাতায়াত: কেওক্রাডংসহ অনুমোদিত পর্যটনকেন্দ্র ব্যতীত অন্য এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ।
২. নিবন্ধিত গাইডের সঙ্গে ভ্রমণ: জেলা-উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদিত গাইড ছাড়া ট্রেকিং করা যাবে না।
৩. তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা: চেকপোস্টে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিতে হবে।
৪. যানবাহনের যোগ্যতা: পাহাড়ি রাস্তায় অযোগ্য বা পারমিটবিহীন যানবাহন প্রবেশে নিষেধ।
৫. অস্ত্র-মাদক নিষিদ্ধ: যেকোনো ধরণের অস্ত্র, মাদক বা বিস্ফোরক প্রবেশে নিষেধ।
৬. জরুরি বন্ধের বিধান: নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিলে পর্যটন কার্যক্রম পুনরায় সীমিত করা যেতে পারে।

জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ডিসি) নাজমা আরা রিনি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এটি জেলা আইনশৃঙ্খলা কোর কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, সেনানিবাস এবং রুমা ইউএনও মো. আদনান হোসেনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে।

কেওক্রাডং ২০২২ সালের শেষভাগ থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপের কারণে বন্ধ ছিল। রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণ নিষিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জুন ২০২৫-এ যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর কিছু এলাকায় নিষেধাজ্ঞা উঠলেও কেওক্রাডং তখনও বন্ধ ছিল।

সাম্প্রতিক পরিবর্তন হিসেবে সেনা প্রকৌশল বিভাগ (ইসিবি) বগালেক থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন করেছে, যা যাতায়াত সহজ করেছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস (২৭ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক প্রথম ঘোষণা দেন। ২৯ সেপ্টেম্বর অফিসিয়াল গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এতে চিংড়ি ঝর্ণাসহ অন্যান্য কেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত।

তবে কিছু সূত্রে স্থগিতের খবর এসেছে। ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ১ অক্টোবর খোলা হচ্ছে না, এবং দুর্গাপূজার পর খোলার সম্ভাবনা আছে। তবে অফিসিয়াল গণবিজ্ঞপ্তি শর্তসাপেক্ষ উন্মুক্তি নিশ্চিত করেছে।

পর্যটকদের জন্য ব্যবহারিক তথ্য

পথ ও সময়: ঢাকা থেকে বাসে ৮-১০ ঘণ্টা → রুমা বাজার ২-৩ ঘণ্টা → বগা হ্রদ হয়ে ৪-৫ ঘণ্টার ট্রেক।

খরচ: বাস ৮০০–১৮০০ টাকা, গাইড ১৫০০–২০০০ টাকা, থাকা-খাওয়া ২০০০–৩০০০ টাকা/দিন।

আকর্ষণ: সবুজ পাহাড়, চিংড়ি ঝর্ণা, বগা হ্রদ, আদিবাসী সংস্কৃতি।

বিদেশীদের জন্য: আর্মি পারমিশন প্রয়োজন।

সতর্কতা: পাহাড়ি আবহাওয়া পরিবর্তনশীল; রেইনকোট, জরুরি ওষুধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নিন।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

বান্দরবান রেসিডেন্সিয়াল হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাসিম উদ্দিন বলেন, “কেওক্রাডং খুললে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে এবং স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে। তবে শর্তগুলো কঠোরভাবে মানা জরুরি।”

পর্যটকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তেজিত, যদিও স্থগিতের গুজব নিয়ে উদ্বিগ্ন। #KeokradongOpen ট্রেন্ড করছে, যেখানে পর্যটকরা লিখছেন, “শর্ত মেনে যাব, কিন্তু দ্রুত খোলুন!”

বাংলাদেশের পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারের জন্য এটি একটি ইতিবাচক সংকেত, তবে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এখনও আছে। জেলা প্রশাসন পরবর্তী আপডেট দিলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে।