বান্দরবানে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশন: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মতবিনিময় সভা
বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবান জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহান।
সভায় পার্বত্য এলাকার ভূমি ব্যবস্থাপনার বিশেষ চ্যালেঞ্জ, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে সহায়ক হবে।
সভার প্রধান আলোচনা
সভায় পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহান বলেন, “পার্বত্য এলাকার ভূমি আইন সমতলের মতো নয়। পাহাড়ি ও জঙ্গল ভরা ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূপ্রকৃতির কারণে এখানে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বেশি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ডিজিটাইজেশন চালু করলে নামজারি, দলিল তৈরি এবং খাজনা প্রদানসহ ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “পার্বত্য এলাকায় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও প্রশাসনিক অদক্ষতা কমাতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম জরুরি। এতে কাগজপত্রের জট কমবে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে।” সভায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ভূমি ম্যাপিং, রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন এবং অনলাইন সেবা চালু হলে স্থানীয় মানুষের জন্য দ্রুত নামজারি এবং খাজনা পরিশোধ সম্ভব হবে। তবে ইন্টারনেট সংযোগের অভাব এবং স্থানীয় জনগণের ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
অংশগ্রহণকারী ও পরামর্শ
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস.এম. মনজুরুল হক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, মৌজার হেডম্যান এবং স্থানীয় মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
হেডম্যানরা উল্লেখ করেন, “পার্বত্য এলাকায় ভূমি সীমানা নির্ধারণে ঐতিহ্যগত সমস্যা রয়েছে, যা ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।” ভূমি অফিসাররা পরামর্শ দেন মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করে স্থানীয়দের সুবিধা বাড়ানো যাবে। সাংবাদিকরা ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে একটি পাইলট প্রোজেক্ট শুরু করে বান্দরবানে ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম চালু করা হবে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পার্বত্য এলাকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম স্থানীয় জনগণের জন্য স্বচ্ছ, দ্রুত এবং জবাবদিহি সম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রয়োগ কাগজপত্রের জট কমাতে, দুর্নীতি রোধ করতে এবং ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই পদক্ষেপ পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।