বান্দরবানে দুস্থ সনাতনীদের জন্য বস্ত্র ও শিক্ষা বৃত্তি

বান্দরবানে শারদীয় দুর্গোৎসবের উদ্বোধন: মহাষষ্ঠীতে ঐতিহাসিক রাজার মাঠে অনুষ্ঠান, দুস্থ সনাতনীদের মাঝে বস্ত্র-শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ।
বান্দরবান প্রতিনিধি: শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষ্যে বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠ সংলগ্ন সার্বজনীন কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সম্প্রীতির বান্দরবানের বার্তা দিয়েছেন।
উৎসবের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রীতির বান্দরবান আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু আমাদের মন বড়ো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একসাথে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করব।” এছাড়া, অনুষ্ঠানে দুস্থ ও অসহায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে বস্ত্র এবং শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে, যা উৎসবের সামাজিক দিককে জোরালো করেছে। জেলায় মোট ৩২টি পূজা মণ্ডপে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে ২২টি গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: ষষ্ঠীর উৎসবমুখর পরিবেশ
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠীতে ঐতিহাসিক রাজার মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজারো ভক্ত উপস্থিত হয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে, এবং সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। প্রধান অতিথি অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, “ষষ্ঠীর উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহাসিক রাজার মাঠে আমরা সকলে একসাথে থাকি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব শেষ হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই এক অপরের পাশাপাশি থাকি এই উৎসবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাওছার, পিপিএম (বার)। তিনি বক্তব্যে বলেন, “পূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমরা তৎপর রয়েছি। শারদীয় উৎসবের অসুর বধ কাহিনী চমকপ্রদ, যা ভক্তদের হৃদয় স্পর্শ করে।” অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীদের গান-নাচ এবং নাটক উপস্থাপন করা হয়েছে, যা উৎসবের উদ্দীপনা বাড়িয়েছে।
বস্ত্র এবং শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ: সামাজিক উদ্যোগ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় দুস্থ ও অসহায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে বস্ত্র এবং শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অধ্যাপক থানজামা লুসাই উপস্থিত ছিলেন, এবং অতিথি হিসেবে ছিলেন পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, জেলার নায়েব আমির এড মোহাম্মদ আবুল কালাম, নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি আবুল কালাম, জেলা পরিষদের সদস্য নাসিরুদ্দিন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির আহ্বায়ক নিখিল কান্তি দাশ, বান্দরবান জেলা পূজা উদয়াপন পরিষদের সভাপতি রাজেশ্বর দাশ বিপ্লব, পূজা উদয়াপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবুজ দত্ত বাচ্চু, কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সদস্য সচিব আনন্দ দাশ সহ অন্যান্য কমিটির সদস্য, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের প্রতিনিধিরা।
এই বিতরণ উৎসবের সামাজিক দিককে জোরালো করেছে, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দ এবং সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা: ৩২টি মণ্ডপ, ২২টি গুরুত্বপূর্ণ
বান্দরবানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা মোট ৩২টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ২২টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। রোববার সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পূজা উদয়াপন উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
জেলা পূজা উদয়াপন পরিষদের সভাপতি রাজেশ্বর দাশ বিপ্লব বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা ও স্বেচ্ছাসেবকরাও কাজ করছে। গত বছরের মতো এবারও শঙ্কাহীন উৎসব হবে।” পূজা উদয়াপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবুজ দত্ত বাচ্চু যোগ করেন, “প্রতিটি মণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে সেনা রিজিয়ন, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে অনেক অনুদান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা কল্পনার বাহিরে।”
পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, “আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছি। উৎসবের অসুর বধ কাহিনী চমকপ্রদ, যা ভক্তদের হৃদয় স্পর্শ করে।”
মহাষষ্ঠীর শুরুতে ঐতিহাসিক রাজার মাঠে বান্দরবানে সকলকে শারদীয় অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। এই পাঁচ দিনের উৎসব আনন্দের সাথে বিদায়ের বেদনা নিয়ে শেষ হবে, যখন মূর্তি নদীতে ভাসানো হবে। বান্দরবানের এই উৎসব সম্প্রীতির প্রতীক, যা সকল সম্প্রদায়কে একত্রিত করে। সকলকে শুভ দুর্গা পূজা।






