কুতুবদিয়ায় পৌঁছেছে রাশিয়ার ৫২,৫০০ মেট্রিক টন গম

রাশিয়া থেকে আগত ৫২,৫০০ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশের খাদ্য আমদানি ব্যবস্থার সফলতার প্রমাণ। খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়ে গম বাজারে পৌঁছালে সাধারণ মানুষের জন্য সরবরাহ সুবিধা বাড়বে।

টুইট প্রতিবেদক: রাশিয়া থেকে ৫২,৫০০ মেট্রিক টন গম বহনকারী জাহাজ ‘এমভি পার্থ’ (MV PERTH) চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে পৌঁছে গেছে। এই চালানটি দেশের খাদ্য আমদানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের আভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী (নম্বর: ১৩.০১.০০০০.০৯৩.৪৬.০২৩.২৫-৬২৯, প্যাকেজ-০১), রাশিয়া থেকে এই ক্রয় ৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সম্পাদিত হয়েছে। জাহাজের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গমের স্যাম্পল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং খালাসের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাহাজের বিবরণ এবং চালানের বণ্টন

‘এমভি পার্থ’ জাহাজটি রাশিয়ার ব্ল্যাক সি অঞ্চল থেকে রওনা হয়ে কুতুবদিয়ার গভীর সমুদ্র অ্যাঙ্করেজে এসে অবস্থান নিয়েছে। জাহাজে মোট ৫২,৫০০ মেট্রিক টন উচ্চমানের গম রয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমদানি করা হয়েছে। চালানটির বণ্টন নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম বন্দরে: ৩১,৫০০ মেট্রিক টন গম খালাস করা হবে এবং স্থানীয় সাইলো ও গুদামে সংরক্ষিত হবে।

মোংলা বন্দরে: বাকি ২১,০০০ মেট্রিক টন গম লাইটার ভেসেলের মাধ্যমে পাঠানো হবে, যাতে পশ্চিমাঞ্চলের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিএসএম) এই খালাস প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করবে। খালাসের পর লাইটার জাহাজের মাধ্যমে গম চট্টগ্রাম ও মোংলায় পরিবহন করা হবে, যা সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

রাশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক

চুক্তিটি সরকার-সরকার ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে এবং রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বড় গম রপ্তানিকারক দেশ। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার গম রপ্তানির পূর্বাভাস ৪.২ মিলিয়ন টন, যার মধ্যে বাংলাদেশকে প্রায় ৫৪,৬০০ টনের চালান বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬০-৭০ লাখ টন গম আমদানি করে, যার বড় অংশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আসে। ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরও বাংলাদেশ এই দুই দেশ থেকে গম আমদানি বাড়িয়েছে, যা ৫ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।

পূর্ববর্তী চুক্তিগুলোতে রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টনেরও বেশি গম আমদানির ঘোষণা হয়েছে, যা দেশের গমের ঘাটতি পূরণে সহায়ক। জুলাই মাসের চুক্তির এই চালান গ্লোবাল মার্কেটে গমের দামের ওঠানামার মধ্যেও স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।

খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চালান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের গমের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন, যার বড় অংশ আমদানিনির্ভর। এই গম সরকারি গুদামে সংরক্ষিত হয়ে ফ্লোর মিল ও বেকারি শিল্পে সরবরাহ করা হবে, যা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আরও কয়েকটি চালান আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে মোট আমদানিকে বাড়াবে। এছাড়া, সরকার গম আমদানির বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য আর্জেন্টিনা এবং অন্যান্য দেশ থেকেও চালান নিশ্চিত করছে। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ আর্জেন্টিনা থেকে ৫২,৫০০ টন গম কুতুবদিয়ায় পৌঁছেছিল।

এই ধারাবাহিক আমদানির মাধ্যমে দেশের গম স্টক স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে, যা মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা করবে।

রাশিয়া থেকে আগত ৫২,৫০০ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশের খাদ্য আমদানি ব্যবস্থার সফলতার প্রমাণ। খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়ে গম বাজারে পৌঁছালে সাধারণ মানুষের জন্য সরবরাহ সুবিধা বাড়বে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে।