বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫: বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি ও চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের হৃদরোগ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো-
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার
- ধূমপান ও মাদকাসক্তি
- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি
- ব্যায়ামের অভাব এবং দ্রুত নগরায়ণ
- জন্মগত সমস্যা
- হাইপারটেনশন রোগীর মধ্যে ৫ জনের ১ জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।
টুইট প্রতিবেদ: আজ সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে প্রতি বছর এই দিবসটি উদযাপিত হয় হৃদরোগের প্রতিরোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এবছরের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন’ (Every Heartbeat Counts – Life)।
বাংলাদেশে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সভা, সেমিনার ও র্যালির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে। হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত, এবং বাংলাদেশে এর মৃত্যুর হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই প্রতিবেদনে হৃদরোগের পরিসংখ্যান, কারণ, চিকিত্সার চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হৃদরোগের ভয়াবহ পরিসংখ্যান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২০.৫ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ৮০% লো-এবং মিডল-ইনকাম দেশে ঘটে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও তীব্র। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ৫৬২ জন হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করছেন, যা বছরে ২০৫,০০০-এর বেশি। আনুমানিক ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। জন্মগত হৃদরোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২০০ শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
সীমিত চিকিৎসা ও সুবিধার সমস্যা
দেশে হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত সীমিত। ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ১,২৫০ বেড থাকলেও ৩,০০০+ রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড, মুগদা ও কুর্মিটোলা হাসপাতাল কিছু আধুনিক সুবিধা প্রদান করে।
দেশের ৯৫% হার্ট সার্জারি ঢাকায় হয়, ফলে রোগীরা রাজধানীতে ছুটছে। জরুরি বিভাগে বিছানার অভাব, জনবল ঘাটতি ও অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর ঘটনা প্রায় দৈনন্দিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশব্যাপী হার্ট সেন্টার সম্প্রসারণ ও জনবল বৃদ্ধি জরুরি, কারণ গ্রামীণ অঞ্চলে প্রাইভেট চিকিৎসা দরিদ্রদের জন্য প্রায় অসম্ভব।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হৃদরোগের প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। ঝুঁকির কারণ যেমন ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও নিষ্ক্রিয় জীবন এড়িয়ে চললে ৮০% মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিং জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সাবেক পরিচালক ডা. আব্দুল্লাহ আল সাফি মজুমদার বলেন, সচেতনতা বাড়ালে ‘নীরব ঘাতক’ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশে হৃদরোগের মৃত্যু বৃদ্ধি একটি জাতীয় সংকট। সরকারি উদ্যোগে চিকিত্সা সম্প্রসারণ, জনবল বৃদ্ধি এবং জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে জন্মগত হৃদরোগ অন্তর্ভুক্তি জরুরি। তবে, ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন ছাড়া এই যুদ্ধে জয় সম্ভব নয়। প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন—এই বার্তা আমাদের সকলের জন্য।






