পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্তপ্ত পরিস্থিতি: ধর্ষণ অভিযোগ ঘিরে সহিংসতা
ধর্ষণ অভিযোগ থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ
টুইট প্রতিবেদন: চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও রক্তাক্ত সংঘর্ষের মুখে পড়েছে। খাগড়াছড়িতে এক আদিবাসী কিশোরীর ধর্ষণ অভিযোগ ঘিরে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে উত্তেজনা শুরু হয়।
জুম্মা ছাত্রদের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ হলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে বিকেলেই বাঙালি সেটলাররা আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে হামলা চালায়। দোকান ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আহত হন অন্তত কয়েকজন।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত সহিংসতা অব্যাহত থাকে। সেনা-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে আদিবাসী পক্ষের অভিযোগ—প্রশাসন দেরিতে এসে দমননীতি গ্রহণ করছে। অন্যদিকে বাঙালি পক্ষ বলছে, ইউপিডিএফ ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ১৪৪ ধারা ভেঙে নাশকতায় লিপ্ত।
এখন পর্যন্ত শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, ডজনখানেক দোকান ও ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। মূলত আদিবাসী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেনাবাহিনী বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করেছে।
সিএইচটি দীর্ঘদিন ধরেই বাঙালি সেটলার ও জুম্মা আদিবাসীদের মধ্যে ভূমি দখল, স্বায়ত্তশাসন ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় এ দ্বন্দ্ব থামেনি। সাম্প্রতিক ধর্ষণ অভিযোগ শুধু নতুন সহিংসতার ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে।
একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সংকট ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়, যখন মারমা সম্প্রদায়ের এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। পরিবার ও স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় একটি খেতে পান। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, পুলিশ মূল আসামি শয়ন শীলকে (বাঙালি) দ্রুত গ্রেপ্তার করে, এবং তার বিরুদ্ধে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাসী ছাত্ররা (জুম্মা ছাত্র জনতা) প্রতিবাদ শুরু করে, যা সড়ক অবরোধ ও ব্লকেডে রূপ নেয়।
তবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) অঞ্চলের এই সংঘাত ভূমি-বিরোধ, স্বায়ত্তশাসন এবং ১৯৭০-এর দশক থেকে চলমান বাঙালি সেটলমেন্টের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ উত্তেজনার অংশ। ১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তি এই উত্তেজনা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
২৬ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর হামলায় তিনজন সেনা সদস্য আহত হন। পরদিন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সাথে যুক্ত বলে অভিযোগী গুলিতে এক টমটম চালক গুরুতর আহত হন। এই সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর, সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ এবং বাঙালি সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। একটি মসজিদে হামলা এবং স্বরনির্ভর বাজারে ১০টিরও বেশি দোকান লুটপাট হয়, যাতে অন্তত ১৭ জন আহত হন। ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি হয়, যা গুইমারা উপজেলাতেও প্রসারিত হয়। তবুও অস্ত্রধারী গোষ্ঠী (ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ) নাশকতা চালিয়ে যায়।
এক্স পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনী আদিবাসী ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছে, যাতে প্রশিয়া ত্রিপুরা এবং কিয়াওথা মারমা গুরুতর আহত হন। অন্যদিকে, আদিবাসীদের দোকান-বাড়ি পোড়ানোর ভিডিও ছড়িয়েছে।
দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি
এই সংকটে বাঙালি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের বর্ণনা মিলছে না, যা সিএইচটি-এর সাধারণ চিত্র।
বাঙালি সম্প্রদায়/সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি: ইউপিডিএফ এবং তাদের প্ররোচনায় (যেমন ইয়ান ইয়ান রাখাইন, প্রজ্ঞা তাপস চাকমা) ছাত্ররা সহিংসতা ছড়াচ্ছে। এটি রাজনৈতিক ফায়দা ও অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র। সেনাবাহিনী সময়োচিত হস্তক্ষেপ করে বড় সংঘাত রোধ করেছে এবং চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র ব্যবসায় বাধা দিচ্ছে। সাধারণ বাঙালি জনগণ সেনার পাশে।
আদিবাসী জুম্মা সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি: ধর্ষণ অভিযোগকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেটলার বাঙালিরা এবং সেনাবাহিনী হামলা চালাচ্ছে। সেনা আদিবাসীদের উপর গুলি চালিয়েছে এবং সেটলারদের রক্ষা করছে। মহাজনপাড়ার মতো ক্যান্টনমেন্টের কাছাকাছি এলাকায় হামলা হলেও সেনা হস্তক্ষেপ করেনি। এটি ভূমি ও স্বায়ত্তশাসনের দীর্ঘ বিরোধের অংশ।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ১০০-এর বেশি মানুষ আহত এবং কয়েক ডজন সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। সেনাবাহিনী অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে, কিন্তু এক্স-এ ভিডিওতে সেনা-আদিবাসী সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো (যেমন এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট) সেনাবাহিনীর ভূমিকা সহ তদন্ত দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইউপিডিএফ নিষিদ্ধকরণ ও চাকমা নেতাদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে। ভারতীয় বা বিদেশী এজেন্টের জড়িত থাকার অভিযোগ রাজনৈতিক, তবে তা প্রমাণিত নয়।