লাদাখে রাজ্য সোনাম ওয়াংচুক গ্রেফতার: বাংলাদেশ সফরকে সন্দেহজনক দেখানোর প্রচেষ্টা

দাখের সোনাম ওয়াংচুকের গ্রেফতার: বাংলাদেশ সফরকে ‘সন্দেহজনক’ বলে জড়ানোর প্রচেষ্টা – পাকিস্তানি গুপ্তচরের যোগসূত্র?

টুইট ডেস্ক: ভারতের লাদাখে রাজ্য মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের নেতা ও পরিবেশবাদী সোনাম ওয়াংচুককে গ্রেফতারের পর নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

লাদাখ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (DGP) এসডি সিংহ জামওয়াল দাবি করেছেন, ওয়াংচুকের বিদেশ সফরগুলো—যেমন, বাংলাদেশ সফর—‘সন্দেহজনক’। এতে পাকিস্তানি গুপ্তচরের যোগসূত্র এবং বিদেশি অর্থায়নের অভিযোগ যুক্ত করে আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সফর নিয়ে সন্দেহ

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) লেহে এক সংবাদ সম্মেলনে DGP জামওয়াল বলেন, “ওয়াংচুক নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। এসব সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের মতো উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যা আন্দোলনকে উস্কানি দিতে পারে।”

যদিও সফরের তারিখ ও উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে পুলিশের মন্তব্যে বাংলাদেশকে পরোক্ষভাবে জড়ানোর চেষ্টা স্পষ্ট।

এক্স (টুইটার)-এ নানা প্রশ্ন উঠছে, “ওয়াংচুক কখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন?” “এই সফর আগে তদন্ত করা হয়নি কেন?”

কিছু পোস্টে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে আন্দোলন উসকে দিয়েছেন।

পাকিস্তানি গুপ্তচরের অভিযোগ

DGP জানান, সম্প্রতি লাদাখে এক পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ (PIO) গ্রেফতার হয়েছে। তার সাথে ওয়াংচুকের যোগাযোগের দাবি করে তিনি বলেন, “গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি বিক্ষোভের ভিডিও সীমান্তের ওপারে পাঠাত। এর রেকর্ড আমাদের কাছে আছে।”

এছাড়াও, পাকিস্তানের Dawn পত্রিকার একটি অনুষ্ঠানে ওয়াংচুকের অংশগ্রহণকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদেশি অর্থায়ন ও এনজিও লাইসেন্স বাতিল

ওয়াংচুকের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ও পরিবেশকেন্দ্রিক এনজিও SECMOL-এর FCRA লাইসেন্স ২৫ সেপ্টেম্বর বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ—সুইডেন থেকে অবৈধ তহবিল গ্রহণ। পাশাপাশি, আরেকটি প্রতিষ্ঠান HIAL সম্পর্কেও তদন্ত চলছে।

DGP জামওয়াল বলেন, “বিদেশি ফান্ডিং নিয়ে তদন্ত চলছে, বিস্তারিত প্রকাশ করা যাবে না।”

সহিংসতা ও NSA-এর অধীনে গ্রেফতার

২৪ সেপ্টেম্বর লেহ শহরে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হন। ওয়াংচুককে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA)-এর আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে, অভিযোগ—উস্কানিমূলক বক্তব্য।

তাঁর স্ত্রী জানান, গ্রেফতারের সময় পুলিশ বাড়ি ভেঙে তল্লাশি চালিয়েছে, কিন্তু কোনো চার্জশিট দেখানো হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ওয়াংচুক ৬ অক্টোবরের কেন্দ্র-লাদাখ আলোচনাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছিলেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ওয়াংচুকের ভাই ফুনসং অভিযোগ করে বলেন, “তিনি শান্তিপূর্ণ অনশন করেছেন। কিন্তু তাঁকে কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য বলি বানানো হয়েছে।”

ভারতের কংগ্রেস ও শিবসেনাসহ বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে, NSA ব্যবহার করে সরকার ভিন্নমত দমনের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশকে জড়ানো নিয়ে বিতর্ক

বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াংচুকের বাংলাদেশ সফরকে সন্দেহজনক বলা হচ্ছে মূলত আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করার কৌশল হিসেবে।

কিছু এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “ওয়াংচুক বাংলাদেশ ও নেপালের মতো অশান্তি চেয়েছেন।” “এই অভিযোগ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে অযথা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”

রোহিঙ্গা ইস্যু ও সীমান্ত নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এটি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।

ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তাঁর সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আন্দোলন দমনের কৌশল। তবে সরকার চাইছে আন্দোলনকে বিদেশি প্রভাবিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করতে।

ফলে, লাদাখের রাজ্য মর্যাদা আন্দোলন এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে।

এই প্রচেষ্টা লাদাখের আন্দোলনকে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে দেখা হচ্ছে। তবে, প্রমাণের অভাবে এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে সমালোচিত।