ভারতের ২৫ হাজার কোটি রুপির ক্ষতি! আসছে ট্রাম্পের ট্যারিফ সুনামি

বাংলাদেশে সুবর্ণ সুযোগ!

“আসছে ট্রাম্পের ট্যারিফ সুনামি: চিংড়ির পর এবার ওষুধ-আসবাবেও আঘাত”।

টুইট প্রতি‌বেদক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্ক ভারতের বিভিন্ন খাতের জন্য ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই শুল্কগুলো বিভিন্ন তারিখে কার্যকর হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে এর প্রভাব সর্বাধিক লক্ষ্য করা গেছে।

চিংড়ির পাশাপাশি সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫-এ ট্রাম্প আরও নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন।

চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে জুলাই ৩১, ২০২৫-এ, যখন মার্কিন সরকার ভারত থেকে আমদানিকৃত চিংড়ির উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করে। পূর্ববর্তী ২৫% শুল্কের সঙ্গে এটি যোগ হওয়ায় মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০%।

এই পদক্ষেপটি ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নীতির ঙ নেওয়া হয়, যা ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয়কে শাস্তি হিসেবে আরোপিত।

পরবর্তীতে আগস্ট ২৭, ২০২৫-এ ট্রাম্প এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে এই শুল্ক কার্যকর করেন। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যায়, আন্ধ্রপ্রদেশে চিংড়ি রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়ে ২৫,০০০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে। NPR ও বিজনেস টুডে প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতি ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

চিংড়ির পাশাপাশি সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫-এ ট্রাম্প আরও নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন। Truth Social-এ দেওয়া পোস্ট অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকটি খাতের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এতে ব্র্যান্ডেড ওষুধের উপর ১০০% শুল্ক, ভারী ট্রাকের উপর ২৫% শুল্ক, কিচেন ক্যাবিনেট ও বাথরুম ভ্যানিটির উপর ৫০% এবং আপহোলস্টার্ড আসবাবপত্রের উপর ৩০% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এই শুল্কগুলো অক্টোবর ১, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।

ভারতের শিল্প ও বাজারে ইতিমধ্যেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চিংড়ি রপ্তানি প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বাজারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওষুধ ও আসবাবপত্র খাতেও শেয়ার মার্কেটে প্রভাব দেখা গেছে; CNN, Reuters ও Al Jazeera রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জেনেরিক ওষুধ শিল্পের শেয়ার মার্কেটে ২% কমেছে এবং দামবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়েছে। ভারত সরকার নতুন বাজার খোঁজা এবং কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রদানের পরিকল্পনা করছে।

সামগ্রিকভাবে, এই শুল্কগুলি ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ নীতির অংশ হিসেবে ২০২৫ সালে ট্রেড ওয়ারকে ত্বরান্বিত করছে। চিংড়ি খাত প্রধানভাবে আগস্ট মাসে প্রভাবিত হলেও, অন্যান্য খাতের প্রভাব সেপ্টেম্বরে আরও স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের জন্য সুযোগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে ভারতীয় রপ্তানি খাত ধাক্কা খাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে চিংড়ি ও ওষুধ খাতে বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চিংড়ি রপ্তানিতে ভারত যেখানে বিপাকে পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় সরবরাহকারী দেশ হিসেবে মার্কিন বাজারে অবস্থান শক্ত করতে পারে।

তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বাড়ানো এবং মার্কেটিং কৌশল উন্নত করা জরুরি।

ওষুধ শিল্পেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় ব্র্যান্ডেড ওষুধে ট্রাম্প প্রশাসনের ১০০% শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন বাজারে জেনেরিক ওষুধের চাহিদা বাড়বে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই জেনেরিক উৎপাদনে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, তাই এই সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে এখনই কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি প্রণোদনা, মার্কিন বাজারে প্রবেশের কৌশল এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ এ খাতে নতুন বাজার দখল করতে পারবে।